উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : নিখিল বিশ্বের নিপীড়িত মানবাত্মার আর্ত চিৎকারের প্রতিধ্বনিই কবিকণ্ঠের প্রলয় হুঙ্কার। এ হুঙ্কার প্রতিকার ছাড়া থামানো যাবে না বলে প্রাবন্ধিক এখানে দৃঢ়তার সাথে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষণ : সারা বিশ্ব জুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট অধিকারহীন মানুষের বুকফাটা ক্রন্দনে বাতাস ভারাক্রান্ত। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসার অভাবে তারা মৃতপ্রায়। শোষণ, বঞ্চনার শিকার এসব মানুষের কান্নাই একমাত্র সাথী। ধুরন্ধর ও অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর কবলে পড়ে তারা তাদের অধিকার, মর্যাদা এমনকি ন্যূনতম চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। তারা অবহেলিত,অপমানিত ও লাঞ্ছিত। এ লাঞ্ছিত মানবাত্মার যন্ত্রণা চিৎকার কবির হৃদয়কে বিপর্যস্ত করেছে। তার বিবেককে দংশন করেছে। পরাধীনতার কারণেই তাদের এ করুণ অবস্থা। তাদের কাছে পৌছে দিতে হবে মানবতার বাণী, তাদেরকে বুঝাতে হবে স্বাধীনতার সুফল। পরাধীনতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে বিদ্রোহের জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। সম্মিলিত প্রলয় হুঙ্কারে রাজশক্তিকে পরাজিত করে আদায় করে নিতে হবে অধিকার ও মর্যাদা তথা স্বাধীনতা। তাহলে প্রতিষ্ঠিত হবে মানবতার বাণী, সাম্য ও ন্যায়বিচার। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্ব হবে মানবতার মিলনক্ষেত্র। অন্তর্হিত হবে নিখিল আত্মার যন্ত্রণা চিৎকার। কবি তাঁর হৃদয়ে তুলে নিয়েছেন নিখিল আত্মার যন্ত্রণা চিৎকার আর কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন প্রলয় হুঙ্কার। কোন রাজশক্তি ভয় দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাঁকে থামাতে পারবে না। এ দেশের নিপীড়িত মানবাত্মার সাথে নিজেকে একাকার করে প্রলয় হুঙ্কারে ফেটে পড়েছিলেন কবি। তাঁকে রাজশক্তি কোন ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে থামাতে পারেনি। তাই রাজদ্রোহী হিসেবে তাঁকে রাজকারাগারে বন্দী করেছে। তারপরও প্রলয় হুঙ্কার বন্ধ হয়নি। যুগে যুগে এভাবেই মহামানবের প্রলয় হুঙ্কারে অত্যাচারী রাজশক্তি পরাভূত হয়।
মন্তব্য: কবি কণ্ঠের যন্ত্রণার যে চিৎকার তা নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের আর্ত চিৎকারেরই বহিঃপ্রকাশ।