উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা
প্রসঙ্গ : এখানে প্রাবন্ধিক আমাদের শিক্ষানীতি ও সমাজনীতির উদ্দেশ্যকে কটাক্ষ করে মূল্যবান মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : এ দেশের লোকে যে যৌবনের কপালে রাজটিকার পরিবর্তে তার পৃষ্ঠে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে সর্বদা প্রস্তুত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এর কারণ হচ্ছে যে, আমাদের বিশ্বাস মানবজীবনে যৌবন একটা মস্ত ফাঁড়া। কোন রকমে সেটি কাটিয়ে উঠতে পারলে বাঁচা যায়। এ অবস্থায় কী জ্ঞানী, কী অজ্ঞানী সকলেই চান যে, এক লাফে বাল্য থেকে বার্ধক্যে উত্তীর্ণ হন। যৌবনের নামে আমরা ভয় পাই, কেননা তার অন্তরে শক্তি আছে। অপরদিকে বালকের মনে শক্তি নেই, বৃদ্ধের দেহে শক্তি নেই। বালকের জ্ঞান নেই, বৃদ্ধের প্রাণ নেই। তাই আমাদের নিয়ত চেষ্টা হচ্ছে দেহের জড়তার সাথে মনের জড়তার মিলন করা, অজ্ঞতার সাথে বিজ্ঞতার সন্ধি স্থাপন করা। আমাদের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ইঁচড়ে পাকানো, আর সমাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জাগ দিয়ে পাকানো। আমাদের উপর্যুক্ত চেষ্টা যে ব্যর্থ হয়নি তার প্রমাণ আমাদের সামাজিক জীবন। আমরা যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছি তাতে কত তাড়াতাড়ি শিক্ষা শেষ করা যায় তারই প্রতিযোগিতা চলছে। সে শিক্ষা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
মন্তব্য: অপরিণত শিক্ষা ও জবরদস্তিজাত প্রতিষ্ঠা সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। তা সমাজকে পিছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।