উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে
প্রসঙ্গ : আমাদের জীবনের একটা মস্ত বড় অসংগতিকে স্পষ্ট করে তোলার জন্য প্রাবন্ধিক এ তির্যক মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বিরাট মহাবিশ্বে আমাদের বসবাস। এ বিশ্বের আদি বা শুরু সম্পর্কে আমাদের কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। এক অভেদ্য রহস্যজালে তা আবৃত। একইভাবে এর অন্ত সম্পর্কেও আমাদের অজ্ঞতা সীমাহীন। আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারি না। আমাদের কাছে শুধু এর মধ্য পর্বটি স্পষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর বাল্য ও বার্ধক্য সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না। জানি শুধু তার বর্তমান বা যৌবনকালকে। আদি ও অন্তহীনতার মধ্যে পৃথিবী আশ্চর্য রকমের উজ্জ্বল হয়ে আছে শুধু তার মধ্য পর্বকে আশ্রয় করে। অথচ এ পৃথিবীতেই বসবাস করে আমরা চলেছি তার বিপরীত পথ ধরে। বাল্য, যৌবন ও বার্ধক্যের সুনির্দিষ্ট কাল পর্বে জীবন বিভক্ত হলেও আমাদের দেশে বাল্য ও বার্ধক্য প্রবলভাবে উপস্থিত। পক্ষান্তরে, যৌবন অনুপস্থিত ও অস্বীকৃত। যৌবনকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ফাঁড়া বলে মনে করে। যৌবনের তেজ ও শক্তিকে তারা ভয় পায়। তাই কোনভাবে তাকে পাশ কাটিয়ে চলতে চায়। কী জ্ঞানী কী অজ্ঞানী প্রায় সকলেই তাদের জীবনে বাল্য থেকে এক লাফে বার্ধক্যে গিয়ে পৌছুতে চায়। ফলে জীবন থেকে বাদ পড়ে যায় সবচেয়ে মূল্যবান মধ্য পর্ব বা যৌবন কালটিই। এ যেন ঠিক একটা অসম্পূর্ণ গ্রন্থের মতো যার ভূমিকা এবং উপসংহার আছে কিন্তু মূল অধ্যায় নেই। একটি গ্রন্থের ভূমিকা এবং উপসংহার যত ভালোই হোক না কেন, মূল অংশ বা মধ্য পর্ব না থাকলে তা কিছুতেই সম্পূর্ণ গ্রন্থের মর্যাদা দাবি করতে পারে না। একইভাবে যৌবনকে বাদ দিয়ে জীবনের বাল্য ও বার্ধক্যের উপর যত গুরুত্বই আরোপ করা হোক না কেন মূল বা মধ্য পর্বহীন গ্রন্থের মতই সে জীবন থেকে যাবে অসম্পূর্ণ ।
মন্তব্য : যৌবনকে বাদ দিয়ে জীবন কিছুতেই সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে না।