আমলাতন্ত্রের ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত কর।

অথবা, আমলাতন্ত্রের নেতিবাচক দিকগুলো কী কী?
অথবা, আমলাতন্ত্রের অসুবিধাগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, আমলাতন্ত্রের সমালোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের সাথে সাথেই আমলাতন্ত্রের বিকাশ ও কার্যাবলি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি একটি সর্বজনীন ধারণায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল সরকারি ব্যবস্থাই হলো কোন না কোন আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামান্তর।
আমলাতন্ত্রের ত্রুটিসমূহ : আমলাতন্ত্রের কতকগুলো ত্রুটি রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. জনগণের স্বার্থের প্রতি উদাসীনতা : প্রশাসনিক কার্যক্রমে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলাতন্ত্রের স্থায়িত্ব, শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানের অধিকার একে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে সাহায্য করে। আমলারা প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ও ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়। নিজেদের কর্তৃত্ব ও
গুরুত্বের ব্যাপারেই তাদের যাবতীয় আগ্রহ প্রকাশ পায়। ফলে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়। আমলারা জনগণের মতামত ও অভাব অভিযোগ সম্পর্কে উদাসীন থাকে ।
২. দীর্ঘসূত্রতা : দীর্ঘসূত্রতা আমলাতন্ত্রের একটি বড় ত্রুটি। আমলারা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির বাইরে যেতে চায় না। ফলে আমলাতান্ত্রিক কাজক মধ্যে যান্ত্রিকতা ও দীর্ঘসূত্রতা প্রকট হয়ে উঠে। এ কারণে আমলাতন্ত্রকে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কাটিয়ে সরকারি কাজকর্মে জাতি আসতে চায় না এবং সরকারি প্রশাসন গতিহীনতায় ভোগে।
৩. স্বতন্ত্র শ্রেণি : আমলাতন্ত্র নিজেদেরকে স্বতন্ত্র শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারীরা সর্বদাই নিজেদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তারা নিজেদের পদ সম্পর্কে ভাবে যে, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, যোগ্যতার বিচার করে সরকার তাদের কাজে নিয়োগ করেছেন। অতএব, তাদের মর্যাদা সমাজে অন্যদের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বে।
৪. রক্ষণশীলতার ধারক : সমালোচকদের দৃষ্টিতে, আমলাতন্ত্র হলো রক্ষণশীলতার ধারক ও বাহক। আমলাদের মধ্যে প্রথা ও ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। তারা গতানুগতিক ধারায় রুটিনমাফিক কাজ করে চলেন। ফলে আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম নিষ্প্রাণ ও যান্ত্রিক হয়ে পড়ে।
৫. অধ্যাপক পারকিনসন এর মতামত : বিশিষ্ট দার্শনিক পারকিনসন আমলাতন্ত্রের কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির কথা বলেছেন। তাঁর মতানুসারে চূড়ান্ত কেন্দ্রিকতা আমলাতন্ত্রের প্রকৃতি। এর ফলে গণতন্ত্রের বিপদ দেখা দেয় । অকারণে জটিলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হলো আমলাতন্ত্রের স্বভাব ও ধর্ম। ফলে আমলাতন্ত্র অনড়, গতিহীন ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের সরকারি ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ।.আমলাতন্ত্র বলতে সরকারি স্থায়ী বেতনভুক্ত কর্মচারীর সমষ্টিকে বুঝায়, যারা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত এবং তারা নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে নীতিগুলোকে বাস্তবে কার্যকরী করে থাকে। আমলাতন্ত্রের বহুগুণ থাকলেও এর কতকগুলো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।