আন্তর্জাতিক রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মূলনীতি লিখ। বাংলাদেশের রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পটভূমি ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। এটা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুঃস্থ, পীড়িত, অসহায় ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রেডক্রস সম্মেলনে রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির
মূলনীতি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তান রেডক্রসকে ‘বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি’তে পরিণত করে।
→ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মূলনীতি ঃ আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি ৭টি । যথা-
১. মানবতা (Humanity);
২. পক্ষাপাতহীনতা (Impartiality);
৩. নিরপেক্ষতা (Neutiality);
৪. স্বাধীনতা (Independence);
৫. স্বেচ্ছামূলক (Voluntary service);
৬. একতা (Unity) এবং
৭. সার্বজনীনতা (Universality)।
১৯৬৫ সালের অক্টোবরে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রেডক্রস সম্মেলনে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মৌলিক নীতিমালাগুলো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
১. মানবতা (Humanity) : কোনো প্রকার ভেদাভেদ ছাড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট আন্ত র্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বত্র মানুষের দুঃখ দুর্দশা প্রতিরোধ ও উপশম করার চেষ্টা করে। জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষা ও মানুষের সম্মান বজায় রাখা এর উদ্দেশ্য। এই আন্দোলন পারস্পরিক
.সমঝোতা, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং সকল জাতির মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।
২. পক্ষপাতহীনতা (Impartiality) : এই আন্দোলন জাতি, গোত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রেণি বা রাজনৈতিক মতবাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করে না। কেবলা মাত্র প্রয়োজনের ভিত্তিতেই এই আন্দোলন মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করে এবং সর্বাধিক বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের সাহায্যের অগ্রাধিকার দেয়।
৩. নিরপেক্ষতা (Neutrality) : সকলের বিশ্বাস ভাজনের উদ্দেশ্য এ আন্দোলন সংঘর্ষকালে কোনো পক্ষ অবলম্বন করে না বা কোনো সময় রাজনৈতিক, গোত্রগত, ধর্মীয় বা আদর্শগত মত বিরোধে অংশগ্রহণ করে না।

  1. স্বাধীনতা (Independence) : এই আন্দোলন স্বাধীন। মানব সেবামূলক কাজে সরকারের সহায়ক হিসেবে জাতীয় সোসাইটি নিজ নিজ দেশের আইনের অধীনে ন্যস্ত থাকলেও আন্দোলনের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার জন্য তাদেরকে অবশ্যই নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে।
    ৫. স্বেচ্ছামূলক সেবা (Voluntary Service) ঃ একটি স্বেচ্ছামূলক ত্রাণ আন্দোলন হিসেবে এই আন্দোলনের কোনো প্রকার স্বার্থ বা লাভ অর্জনের উদ্দেশ্য নেই।
    ৬. একতা (Unity) ৪ কোনো দেশে কেবলমাত্র একটি রেডক্রস বা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি থাকতে পারে। সকলের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকতে হবে। দেশের সর্বত্র এর মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে হবে।
    ৭. সার্বজনীনতা (Universality) : সমমর্যাদাসম্পন্ন এবং পরস্পরকে সাহায্যের জন্য সমান দায়িত্ব ও কর্তব্যের অধিকারী, জাতীয় সোসাইটিসহ গঠিত বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট আন্দোলন সার্বজনীন।
    → বাংলাদেশে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পটভূমি ঃ ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটি অ্যাক্ট- ১৯২০ এর অধীনে এ অঞ্চলে রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ফলে পাকিস্তানের ভৌগোলিক এলাকায় পূর্বের আইনের সামান্য রদবদল করে পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্তান ব্রাঞ্চ বাংলাদেশের জাতীয় সোসাইটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকরের নিকট স্বীকৃতি লাভের জন্য আবেদন
    করে। ৪ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়।এরপর ৩১ মার্চ ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আদেশ ১৯৭৩
    ্ (পিও২৬) জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির স্বীকৃতি লাভ করে এবং রেডক্রস সোসাইটি এ্যাক্ট- ১৯২০ বাতিল বলে গণ্য হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের তেহরান সম্মেলনে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ সালের ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির
    আদেশের সংশোধনী বলে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি’ করা হয়।
    উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি তার কার্যক্রম মূলনীতির নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত করে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ জর্জরিত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে ও সুস্থ মানবতার সেবায় বহুমুখী ও গতিশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ও সিটি কর্পোরেশনে রেডক্রিসেন্ট ইউনিট রয়েছে যার মাধ্যমে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।