আধুনিক রাষ্ট্রের পৌন কার্যাবলি আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলিসমূহ কী কী?

উত্তর: ভূমিকা: একটি রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের রাজনৈতিক জীবন রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। প্রাচীন গ্রিসের প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের কাছে রাষ্ট্র ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রীক দার্শনিকদের মতে সুন্দর ও সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান। রাষ্ট্র একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হওয়ায় এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলোও ব্যাপক ও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

ঐচ্ছিক বা সেকেন্ডারি ফাংশন (ঐচ্ছিক ফাংশন): যে কাজগুলো রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য করতে হয় তাকে ঐচ্ছিক ফাংশন বলে।

রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলী নীচে আলোচনা করা হয়েছে:

১. শিক্ষামূলক কাজ ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। ভাই রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ হল শিক্ষামূলক কার্য সম্পাদন করা। একটি আধুনিক রাষ্ট্রকে শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. সামাজিক নিরাপত্তা বিধান: সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অপরিহার্য। সামাজিক নিরাপত্তা দিতেও রাষ্ট্র যথেষ্ট তৎপর। তাই রাষ্ট্র নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, বয়স্কদের বার্ধক্য ভাতা দেয় এবং দরিদ্রদের সাহায্য করে।

৩. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দেশের উন্নয়ন ও সভ্যতার মাপকাঠি হল তার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আধুনিক রাজ্যগুলি দেশের ভিতরে এবং বাইরে ভ্রমণ এবং যোগাযোগ দ্রুত এবং আরামদায়ক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্যে, বিভিন্ন রাস্তা, পুল, নির্মাণ, পোস্ট এবং এর সিস্টেমগুলি প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়।

৪. জনস্বাস্থ্যের কাজ: আধুনিক রাষ্ট্রগুলি জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল, শিশু গৃহ, মাতৃত্বকালীন হোম, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

৫. শিল্প ও বাণিজ্যের শিল্পায়ন ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন অসম্ভব। রাষ্ট্র শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্য সম্পর্কিত কার্যক্রম সমর্থন করে। তাই, নতুন শিল্প স্থাপন এবং শিল্প স্থাপনে শিল্পপতিদের উৎসাহিত করা, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কাজগুলির মধ্যে রয়েছে।

৬. শ্রমিক কল্যাণ আধুনিক রাষ্ট্র শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে। রাষ্ট্র শ্রমিকদের তাদের কল্যাণের জন্য মজুরি, ভাড়া, ভাতা এবং প্রান্তিক সুবিধা প্রদান করে।

৭. কৃষির উন্নয়ন: রাষ্ট্র কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষকদের পুনর্বাসনে রাজ্য তাদের ঋণ সহায়তা, সার, কীটনাশক এবং কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়।

৮. জনহিতৈষী: আধুনিক রাষ্ট্র অনেক জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ, সেচ সহায়তার ব্যবস্থা, বিনোদনের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

৯. বৃদ্ধ বয়স ভাতা এবং পুনর্বাসন: আধুনিক রাষ্ট্র বয়স্কদের জন্য ভাতা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে, যাতে তারা তাদের বৃদ্ধ বয়সে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়, রাষ্ট্র বয়স্ক এবং পরিত্যক্তদের ভাতা প্রদান করে।

১০. বিবিধ : উল্লিখিত কার্যাবলি ছাড়াও আধুনিক রাষ্ট্র কতিপয় বিবিধ কাজ সম্পাদন করে থাকে। যেমন- নারীদের সেবার ব্যবস্থা, ভূমিসংস্কার, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ প্রভৃতি।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। তাছাড়া জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারতার সাথে সাথে মানুষের চিন্তার ব্যাপক প্রসারতা ঘটেছে। যার ফলে আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধা করা যে হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।