আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কী?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের লক্ষ্যসমূহ কী?
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর:ভূমিকা : রাষ্ট্র হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই মানুষের রাজনৈতিক জীবন আবর্তিত হয়। প্রাচীন কালে গ্রিসের প্লেটো এবং এরিস্টটল এর কাং রাষ্ট্র ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ গ্রিক দার্শনিকদের মতানুসারে সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন প্রতিষ্ঠার জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বর্তায় । রাষ্ট্র একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হওয়ার ফলে এর উদ্দেশ্য এবং লক্ষাও ব্যাপক ও বিস্তৃত রূপ ধারণ করেছে। আর রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ভর করে।আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্যের শেষ নেই। প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন মতৈক্য গড়ে উঠে নি। মূলত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তার প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল এবং রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে কোন মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি। রাষ্ট্রের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিক ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের ধারণা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি : প্রাচীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিম্নোক্ত ধারণা পোষণ করেছেন প্লেটো ও এরিস্টটল (Plato and Aristotle) এর মতে, “গ্রিসের প্লেটো ও এরিস্টটলের নিকট রাষ্ট্র ছিল।স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাষ্ট্রের মধ্যেই ব্যক্তিজীবনের সম্পূর্ণতার সন্ধান সম্ভব। এ গ্রিক দার্শনিকদের মতানুসারে ‘সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন প্রতিষ্ঠার জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বর্তমান।”
সেন্ট টমাস একুইনাসের অভিমত, “রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো জনগণের কল্যাণসাধন করা।” এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “মেষপালক মেঘপালের তদারকি করবে এবং ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা যাদের দায়িত্বভার নিয়েছে, তাদের কল্যাণসাধন করবে।” টমাস হবস (Thomas Hobbies) এর মতে, “রাষ্ট্রের কাজ হলো শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করা।” জন লক (John Locke) বলেছেন, ”রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানবসমাজের মঙ্গল সাধন, কিন্তু চরমতম লক্ষ্য হলো সংঘবন্ধ জীবনে সম্পতি সংরক্ষণ। ফরাসি যুক্তিবাদী দার্শনিক রুশো (Rousseau) এর মতানুসারে, “রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মঙ্গলময় জীবন রে করার জন্য। প অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner) রাষ্ট্রের তিনটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। যথা”দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো প্রথম উদ্দেশ্য, সমাজের সমগ্র কল্যাণসাধন হলো দ্বিতীয় উদ্দেশ্য এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে সাহায্য করে বিশ্বজ্ঞানীন সমৃদ্ধি সাধন হলো তৃতীয় উদ্দেশ্য।”ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত এডাম স্মিথ (Adam Smith) রাষ্ট্রের তিনটি মুখ্য উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। যথা :

ক. অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সমাজকে রক্ষা করা।

খ. সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে অন্যায় অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করা ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করা এবং গ . ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অসম্ভব এমন সব কাজকর্ম সম্পাদন করা এবং জনগণের প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠন ও সংরক্ষণ করা।

আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বিচারের ক্ষেত্রে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন।
অধ্যাপক লাস্কির (Prof. Laski) মতানুসারে, “রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জনগণের সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণসাধনের জন্য। মানুষের আচার আচরণের ঐক্য সাধনের মধ্যে রাষ্ট্রের কার্যাবলি সীমান্ত।
অধ্যাপক লিপসন (Prof. Leslie Lipson) রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষা, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “Protection grows into order and order seek to
blossom into justice”.

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি : মার্কসীয় দর্শন অনুসারে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, ঐতিহাসিক বস্তুবাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে বলা হয় যে, মানবসমাজের ক্রমবিকাশের একটি বিশেষ স্তরে সমাজের শ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষণ ও শ্রেণি শোষণ কায়েম করার জন্য রাষ্ট্রের উদ্ভব। বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা নিহিত আছে সমাজের প্রচলিত শ্রেণি সম্পর্ক বা সম্পত্তি সম্পর্ক সংরক্ষণের উদ্দেশ্যের মধ্যেই।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট অভিমত আপন করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য স্থান, কাল ও পাত্রভেদে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। তবে সাধারণভাবে অনুকল্যাণ সাধনকেই আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বা মনে করা হয়।