আধুনিক রাষ্ট্রের অপরিহার্য কার্যাবলি আলোচনা কর ।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের মূল কার্যাবলিসমূহ কী?
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় কার্যাবলিগুলো কী কী?
অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলিগুলো কী কী?

উত্তর: ভূমিকা: রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের রাজনৈতিক জীবন রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে প্রাচীন গ্রিসের প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের কাছে রাষ্ট্র ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রীক দার্শনিকদের মতে সুন্দর ও সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান। রাষ্ট্র একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হওয়ায় এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলোও ব্যাপক ও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

অত্যাবশ্যকীয় ফাংশন: যে ফাংশনগুলি সম্পূর্ণ না হলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তাকে মৌলিক বা অপরিহার্য ফাংশন বলে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় কার্যাবলী নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১. প্রশাসনিক কাজ: রাষ্ট্রের অপরিহার্য কাজগুলির মধ্যে প্রধান কাজ হল প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন। আর এজন্য সরকারকে আইন বিভাগ গঠন করতে হবে যা আইন বিভাগ দিয়ে থাকে। অধিকন্তু, সঠিক নীতি প্রণয়ন, কর্মচারী নিয়োগ এবং সঠিক শাসনের জন্য তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

২. অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ: রাজ্যের শান্তি ও শৃঙ্খলা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাজ্য পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়। এ কারণেই রাষ্ট্র পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধীদের জন্য কারাগার স্থাপন এবং দ্রুত সাজা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করে। ক্রয়, তাদের উপযুক্ত বেতন ভাতা এবং

৩. সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা: সার্বভৌমত্ব অর্জিত না হলে যেমন একটি রাষ্ট্র গঠিত হয় না, তেমনি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে গেলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও বন্ধ হয়ে যায়। তাই
সার্বভৌমত্ব রক্ষা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ। সার্বভৌমত্ব রক্ষা না হলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে বাধ্য।

৪. অর্থনৈতিক কার্যাবলী: রাষ্ট্রের সমস্ত কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আর্থিক কর্মকান্ড ছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক কার্যাবলী স্থবির হয়ে পড়ে। তাই বিভিন্ন ধরনের কর নির্ধারণ করা এবং তা যথাযথভাবে আনা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

৫. বিচারকার্য : ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রকে বিচার বিভাগ গঠন, সৎ ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ ন্যায়বিচার সম্পন্ন করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। আর এ ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই কেবল অপরাধীদের শাস্তি বিধান করা এবং নিরপরাধীকে রক্ষা করা সম্ভব।

৬. আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়ন, আইন পরিবর্তন বা বাতিল প্রভৃতির জন্য রাষ্ট্রকে আইন বিভাগ গঠন করতে হয়। আইনগুলো যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তার সঠিক ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিয়ে থাকে।

৭. কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ। কেননা বর্তমানে কোন রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। রাষ্ট্রের অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য প্রতিবেশী ও দূরের রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক
রক্ষা করা প্রয়োজন।

৮. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণ যাতে অত্যন্ত নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে বাস করতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ। আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।

৯. উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই বর্তমান কালের রাষ্ট্রগুলো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বারা নাগরিকদের যথার্থ উন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

১০. অধিকার রক্ষা : আধুনিক রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। নাগরিকের অধিকারগুলো তাদের জীবন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি। সম্পাদন করে থাকে। তাছাড়া জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারতার সাথে সাথে মানুষের চিন্তাচেতনা ও ধ্যানধারণার ব্যাপক প্রসারতা ঘটেছে। যার ফলে আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধান করা যে হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।