আদিম সাম্যবাদ কী?

অথবা, আদিম সাম্যবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, আদিম সাম্যবাদ কাকে বলে?
অথবা, আদিম সাম্যবাদ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের সামাজিক বিবর্তন প্রসঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণের সাহায্য নিয়েছেন। মানুষের আবির্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়কে আদিম সাম্যবাদী সমাজ বলা হয়। এখানেই মানুষের আদি ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল। মানুষের সকল অগ্রযাত্রা, ঘাতপ্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।
আদিম সাম্যবাদ (Primitive communism) : মানুষের সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস আলোচনায় মার্কস সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মানবের আবির্ভাবের পর থেকে অগ্রগতির প্রথম পর্যায় হিসেবে আদিম সাম্যবাদকে চিহ্নিত করেছেন। Marxist মতে বলা হয়, আদিম সমাজে কোন ব্যক্তিমালিকানা ছিল না। সেখানে সর্বক্ষেত্রে
সাম্যের নীতি অনুসৃত হতো। সকল সম্পত্তির উপর গোষ্ঠী বা সমষ্টিগত মালিকানা বৰ্তাত।
Leontyeve তাঁর ‘Political Economy’ গ্রন্থে বলেছেন, Marx এবং তাঁর অনুসারীগণ Engels ও Lenin আদিম সমাজকে Primitive Communism বলে উল্লেখ করেছেন। Leontyeve আরও বলেছেন, “There was no private property. Everything the primitive group owned was common property.” অর্থাৎ, শত সহস্র বছর ধরে আদিম সমাজে কোন ব্যক্তিগত মালিকানা পরিলক্ষিত হয় নি।

The Encyclopaedia Britanica (1984) তে বলা হয়েছে, জার্মান দার্শনিক F. Engels আদিম তত্ত্বের উদ্ভাবক।
The Encyclopaedia Britanica তে দাবি করা হয়েছে, কতিপয় আদিম সমাজও সংস্কৃতি থেকে আংশিক বা পক্ষপাতি দৃষ্টিকোণ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে Engels আদিম সাম্যবাদের তত্ত্ব দিয়েছেন। Britanica তে আরও বলা হয়েছে Engels এর গবেষণা যতটা না বিজ্ঞানভিত্তিক তার চেয়ে অধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। অদ্যাবধি এ
তত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। মানব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল । তারা জ্ঞানবিজ্ঞান বা প্রযুক্তিগত দিক থেকে ছিল সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। তাদের প্রথম ও প্রধান চিন্তাই ছিল কিভাবে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়। এ সময়ে পাথরের তৈরি বহু অমসৃণ হাতিয়ার ও অস্ত্রের সন্ধান পায়। এ সময়ে মানুষ মৎস্য ও পশু শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ করে জীবনধারণ করত। তবে মাছ ধরার স্থান বা পশু শিকারের বনভূমি কারও ব্যক্তিগত মালিকানায় ছিল না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোক একথা বলা যায় যে, আদিম সাম্যবাদী সমাজের মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে অনেকেই কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সমাজকে সাম্যবাদী সমাজ বলা হলেও পুরোপুরি অর্থে সাম্যবাদ সমাজ তখন বজায় ছিল না। ইতিহাসের যুগ বিভাজনে আদিম সাম্যবাদী সমাজের আলোচনায় অনেক মনীষী অংশগ্রহণ করেছেন। সামাজিক ইতিহাসকে জানতে হলে আদিম সাম্যবাদী সমাজকে জানা অপরিহার্য।