অথবা, আদিম সাম্যবাদী সমাজের আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষের সামাজিক বিবর্তন প্রসঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণের সাহায্য নিয়েছেন। মানুষের আবির্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়কে আদিম সাম্যবাদী সমাজ বলা হয়। এখানেই মানুষের আদি ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল। মানুষের সকল অগ্রযাত্রা, ঘাতপ্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।
সমালোচনা : বহু মনীষী আদিম সাম্যবাদী সমাজের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। যেমন-
প্রথমত, আদিম সাম্যবাদী সমাজের ধারণা Non-Marxistগণ সমর্থন করেন না। লুঈ তাঁর ‘Primitive Society’ (1960) এবং ‘Social Organization’ (1966) গ্রন্থে আদিম সাম্যবাদী সমাজের সমালোচনা করে বলেছেন, সেখানে ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। তিনি বলেছেন, “This Assumption is Demonstratively False.”
দ্বিতীয়ত, Sir Henry Maine তাঁর ‘Ancient Law’ গ্রন্থে এ সময়ের যৌথ মালিকানা ব্যবস্থার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু লুঈ বলেছেন, “যৌথ মালিকানা বলতে সম্প্রদায়গত মালিকানা বা সাম্যবাদকে বুঝায়, এমন কোন কথা নেই। এর যৌথ মালিকরা একজোড়া অংশীদার, একটি পরিবার, একটি সংঘ, একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, একটি শিব অথবা মাতাপিতা সূত্রে আবদ্ধ কোন শিবের অংশ বিশেষ হতে পারে। কিন্তু একে সাম্যবাদ বলা চলে না।
তৃতীয়ত, নৃবিজ্ঞানী গোল্ডেন ওয়েজার বলেছেন, “আদিম মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই, এ ধারণা ভুল।” ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা মানুষের উৎপত্তির ইতিহাসের মতই পুরাতন। সংগীত, নৃত্য, গল্প, জাদু প্রভৃতি আদিম সমাজে ব্যক্তিমালিকানায় ছিল।
চতুর্থত, ফ্রাঞ্জ বোয়াস বলেছেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই, এমন কোন ট্রাইবের কথা আমরা জানি না। একজন মানুষ তার তৈরি হাতিয়ার ও বাসনপত্র যা সে ব্যবহার করে কার্যত তাই তার সম্পত্তি। এটা সে নিজে ব্যবহার করতে পারে; কাউকে প্রদান বা ধ্বংস করতে পারে।
পঞ্চমত, দ্য ম্যাকমিলান ফ্যামিলি এনসাইক্লোপেডিয়াতে বলা হয়েছে, “মার্কসীয়রা মনে করেন যে, আদিম সমাজ
ছিল সাম্যবাদী। অর্থাৎ, সম্পত্তি ছিল সমষ্টির মালিকানায় এবং সবাই মিলে তা ব্যবহার করত। তবে আদিম সমাজ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড হলো এ সমাজে Personal Property তে একটা বিশেষ মাত্রায় ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল। তবে Real Property তে ব্যক্তিমালিকানার বিষয়টি অনেক পরের। জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব হলো তখন, যখন যাযাবর মানুষ কৃষি সমাজে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, আদিম সাম্যবাদী সমাজের মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে অনেকে কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সমাজকে সাম্যবাদী সমাজ বলা হলেও পুরোপুরি অর্থে সাম্যবাদ বজায় ছিল না। তবে ইতিহাসের যুগ বিভাজনে আদিম সাম্যবাদী সমাজের আলোচনায় অনেক মনীষী অংশগ্রহণ করেছেন।