আদিম সাম্যবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

অথবা, আদিম সাম্যবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা কর।
অথবা, আদিম সাম্যবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের সামাজিক বিবর্তন প্রসঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণের সাহায্য নিয়েছেন। মানুষের আবির্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়কে আদিম সাম্যবাদী সমাজ বলা হয়। এখানেই মানুষের আদি ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল। মানুষের সকল অগ্রযাত্রা, ঘাতপ্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখান থেকেই শুরু হয়েছিল ।
আদিম সাম্যবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্য : আদিম সাম্যবাদী সমাজ বিশ্লেষণে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের অবতারণা করা যায়। এগুলো হলো :
ক. সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানার অনুপস্থিতি : Leontyeve বলেছেন, আদিম সাম্যবাদী সমাজে কোন ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। সকলে সকল সম্পত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করত। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা সেখানে অনুপস্থিত ছিল ।
খ. শ্রেণীহীন সমাজ : ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকার কারণে আদিম সাম্যবাদী সমাজ ছিল শ্রেণীহীন। শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা বিরাজ করার কারণে সেখানে শ্রেণী বৈষম্য ছিল না। ফলে শ্রেণী দ্বন্দ্বও ছিল না।
গ. খাদ্য সংগ্রহকারী : আদিম সাম্যবাদী সমাজের মানুষ খাদ্য সংগ্রহের জন্য হন্যে হয়ে দুর্গম পথ অতিক্রম করত। তারা ফলমূল সংগ্রহ, মৎস্য ও পশু শিকারের জন্য বের হতো। সংগৃহীত খাদ্য সকলে মিলে ভোগ করত। তারা খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না।
ঘ. সহযোগিতার সমাজ : সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ছিল আদিম সাম্যবাদী সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ সমাজে যৌথ চেতনার উপস্থিতি মেলে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ তখনও সমাজে উৎপত্তি লাভ করে নি।
ঙ. খাদ্য বণ্টনে সমতা : খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য বণ্টন সকল ক্ষেত্রে সমাজে সমতার নীতি অনুসরণ করা হতো। তারা খাদ্যের সন্ধান পেলে ভূরিভোজে অংশগ্রহণ করত। না পেলে উপোষ থাকতে হতো। তাই বলা হতো, “Life was either • feast or a fast.”
চ. প্রাকৃতিক শ্রমবিভাগ : এ সমাজে শ্রমবিভাগ ছিল কেবল বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক। শিশু, নারী ও পুরুষ দক্ষতা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন কাজ করলেও খাদ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় ছিল। শিশু ও বৃদ্ধরা কোন কঠিন কাজ করত না।
ছ. পারস্পরিক উপহার আদান প্রদান : আদিম সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ ছিল না। তারা ছিল একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিলি করা হতো।
জ. যৌথ পরিবার : এ সময়ে যৌথ সম্পত্তির ন্যায় দলগত বিবাহভিত্তিক যৌথ পরিবার ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। Morgan এর পরিবারের উৎপত্তিকে Marx সমর্থন দিয়ে বলেছেন, এ সময়ে Consanguine ও Punaluan পরিবার ব্যবস্থা টিকে ছিল । পরিবার যখন Moanoganvian Family তে রূপ নিল তখনই উদ্ভব হলো ব্যক্তিগত মালিকানা। Marxistগণ মনে করেন আদিম সাম্যবাদী সমাজের ন্যায় ভবিষ্যতে আধুনিক সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। আদিম সাম্যবাদী সমাজের ন্যায় সেখানে শ্রেণী শোষণ, শ্রেণী দ্বন্দ্ব কোন কিছুই থাকবে না ।
উপসংহার : উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, আদিম সাম্যবাদী সমাজে নানা বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে আলাদা ছিল। তাদের সমাজ ব্যবস্থা বাস্ত বিক অর্থে অনেকটা প্রশংসার দাবিদার কারণ সে সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণী শোষণ, শ্রেণীদ্বন্দ্ব কিছুই ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা তাদের মাঝে একতা ছিল এবং সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই ছিল আদিম সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য।