অথবা, আদিম সমাজের খাদ্য অর্জন কৌশল লিখ।
অথবা, আদিম সমাজের খাদ্য অর্জন কৌশল বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : Life is either a feast or a fast’ এটি ছিল আদিম সমাজের খাদ্য সংগ্রহ কৌশলের মূলমন্ত্র। সমাজ বিকাশের প্রথম পর্যায়ে মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না। তারা বিভিন্ন বনজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবিকানির্বাহ করত। এজন্য আদিম অর্থনীতিকে খাদ্য সংগ্রহের অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
খাদ্য উৎপাদন কৌশল : আদিম সমাজে মানুষেরা খাদ্য সংগ্রহের পর্যায় অতিক্রম করে খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। তাদের খাদ্য উৎপাদনের কৌশলগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. উদ্যান কৃষি : বাড়ির আশপাশে দা, কুড়াল, কোদাল প্রভৃতি দিয়ে জমি চাষ করে ফলমূল, শাকসব্জি, তরিতরকারি উৎপাদনকে উদ্যান কৃষি বলা হয়। এসব আবাদের ইতিহাস খুব প্রাচীন। কাঠ, হাড়, মেরুদণ্ডী প্রাণীর শক্ত
খোল ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত হত যন্ত্রপাতি। পরবর্তী সময়ে এসব যন্ত্রে ধাতুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
২. কৃষি ব্যবস্থা : আদিম সমাজে উদ্যান কৃষি ছিল সীমিত পরিসরে, কিন্তু কৃষিকাজ ব্যাপক হারে করা হতো। এ কারণে কৃষির জন্য প্রয়োজন হতো আবাদযোগ্য জমি, লাঙল ও লাঙল চালানোর জন্য পশু। নদীর পাড় ঘেঁষে এবং সুবিধাজনক জলসেচের আওতায় কৃষিক্ষেত্র গড়ে উঠত। এভাবে কৃষির বিস্তৃতিতে উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন হয় এবং উদ্বৃত্ত ফসল ফলার সাথে সাথে পরিশ্রমনির্ভর ও অবসরভোগী শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। উৎপন্ন ফসলের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপন্ন হতো ধান এবং এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল, ইউরোপ ও আফ্রিকায় গম, যব ও ভুট্টার চাষ শুরু হয়।
৩. পশুপালন : প্রাচীন সমাজে ঘোড়া, গরু, গাধা, ছাগল, ভেড়া, উট, বিড়াল, কুকুর প্রভৃতি স্তন্যপায়ী প্রাণীকে পোষ মানিয়ে পালন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। গৃহপালিত পশু থেকে মাংস, দুধ, রক্ত, চামড়া, পশম ইত্যাদি পাওয়া যেত। তাছাড়া ঘোড়া, গাধা ইত্যাদির পিঠে যাতায়াত ও মাল বহনের ব্যবস্থা করা হতো।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে আদিম সমাজে খাদ্য অর্জন কৌশল সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। আদিম সমাজের মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করত। আস্তে আস্তে সময়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ খাদ্য উৎপাদন করা শুরু করে। খাদ্য উৎপাদনের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় ।