আদর্শ নমুনায়নের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়নের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।

অথবা, আদর্শ নমুনায়নের মানদণ্ড আলোচনা কর। স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়নের
মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আদর্শ নমুনায়নের বিষয়বস্তুগুলো আলোচনা কর। স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ
নমুনায়নের মধ্যে সামঞ্জস্য ও অসামঞ্জস্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আদর্শ নমুনায়নের প্রকৃতিগুলো আলোচনা কর। স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ
নমুনায়নের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে যদি শুধু নমুনায়ন পদ্ধতিকে সুবিধাজনক বা উত্তম বলে মনে করা হয় তাহলে অনেক সময় এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। গ্রহণ করার আগে নমুনাকে প্রতিনিধিত্বশীল কি না তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। এখানে নমুনার গ্রহণযোগ্যতা পরিমাপ ও কিভাবে বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হবে তার নকশা গ্রহণ করা আবশ্যক।
নমুনায়নের বৈশিষ্ট্য : উত্তম ও প্রতিনিধিত্বশীল না হলে নমুনায়নের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। নিম্নে নমুনায়নে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হল :
১. নমুনাকে অবশ্যই প্রতিনিধিত্বশীল হতে হবে, নমুনার আকার বড় বা ছোট যেটাই হোক। এ প্রসঙ্গে P. V. Young বলেছেন, “নমুনার আকৃতি এর প্রতিনিধিত্বশীলতার নিশ্চয়তা দান করে না। সঠিকভাবে নির্বাচিত অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র নমুনাগুলো দুর্বলভাবে নির্বাচিত বড় আকারের নমুনাগুলো অপেক্ষা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। নমুনার প্রকৃতি নির্বাচন
এমনভাবে করতে হবে যেন সমীক্ষার অন্তর্গত সমগ্রকের প্রতিটি বিষয় নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।”
২. নমুনায়ন নির্বাচন পক্ষপাতহীন হতে হবে। প্রতিনিধিত্বশীল নমুনাকে পক্ষপাতদুষ্ট নমুনা বলে । পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার কারণ—
অনুসন্ধানকারীর নমুনা সংগ্রহের সময় উদ্দেশ্যমূলক মনোভাব থাকলে,
যন্ত্রপাতি ঠিক না থাকলে,
গ. প্রশিক্ষণ ছাড়া গবেষক হলে এবং
প্রাপ্ত যন্ত্রপাতি পারদর্শিতার সাথে ব্যবহার না করতে পারা। এ কারণগুলো দ্বারা নমুনায়ন পক্ষপাতদুষ্ট হয়। উত্তম নমুনায়নের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু ও কার্যাবলি স্বাভাবিক উপায়ে সংঘটিত হতে হবে। প্রত্যেক উপায়ে বিষয়বস্তুর তার চাহিদা পূরণ না করলেও নির্বাচিত এককগুলো বিষয়বস্তু ও কার্যাবলি সাধনের উপায় অনুসারে হতে হবে। নমুনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে সাম্য থাকতে হবে। এগুলো দেখতে একই রকম হতে হবে।

  1. নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রবীণ গবেষকদের কাছ থেকে নতুন গবেষকদের কিছু কল্যাণ গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হলে চলবে না। তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অনেক নতুন বিষয়ে ধারণা লাভ করা সম্ভব হয়। নমুনা বেশি ছোট হয়ে গেলে প্রতিনিধিত্বশীল নাও হতে পারে। এর ফলে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র এককগুলোকে নমুনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যা দ্বারা প্রয়োজনের সময় আন্তঃপরিবর্তন সম্ভব হয়।
    পার্থক্যসমূহ : স্তরিত ও গুচ্ছ নমুনায়নের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করা হল ঃ সাদৃশ্য : স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়নের মধ্যে একটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। সেটা হচ্ছে দু’টি পদ্ধতিতে সমগ্রককে নানারকম বৈশিষ্ট্যের আলোকে শ্রেণীবিভাগ করার পর সে স্তর হতে আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
    বৈসাদৃশ্য : স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়নের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে
    দেখা যায় । নিম্নে তা আলোচনা করা হল :
    কিছু বিষয়ে বৈসাদৃশ্য বা অমিল
    ১. স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে সমগ্রককে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ভাগ করে অবাধ দৈবচয়ন পদ্ধতিতে প্রত্যেক স্তর হতে প্রয়োজনীয় যে নমুনা নির্বাচন করা হয় তাকে স্তরিত নমুনা বলে। অপরদিকে, গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রককে বিভিন্নভাবে ভাগ করে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকটি গুচ্ছ গবেষণার জন্য নির্বাচন
    করে প্রতিটি গুচ্ছের আলাদা আলাদা তথ্য সংগ্রহ করাকে গুচ্ছ নমুনায়ন বলা হয়।
    স্তরিত নমুনায়নের সময় আন্তঃস্তরের উপাদানে পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু গুচ্ছ নমুনায়নের ক্ষেত্রে আন্তঃস্তরের উপাদানগুলোর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় না।
    স্তরিত নমুনায়নের সময় মধ্যস্থিত স্তরের মাঝে পার্থক্য দেখা যায় না। অন্যদিকে, গুচ্ছ নমুনায়নের ক্ষেত্রে মধ্যস্থ স্তরের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। স্তরিত নমুনায়নের ক্ষেত্রে নমুনা নির্বাচন করলে প্রতিনিধিত্বশীলতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, গুচ্ছ
    পদ্ধতিতে নমুনা নির্বাচন করলে সমগ্রকের নানা এককের প্রতিনিধিত্বশীলতা বজায় থাকার সম্ভাবনা থাকে না। স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে এককের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গভীর তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতে একক সম্পর্কে গভীর তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। স্তরিত নমুনায়নে ভ্রান্তি কম থাকে। কারণ বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমগ্রকের বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলনের সম্ভাবনা কম থাকার কারণে নমুনাভ্রান্তি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্তরিত নমুনায়নে ভৌগোলিক পরিধির ক্ষেত্রে বিশাল জনগোষ্ঠীর উপর গবেষণা করার ফলে সময় ও খরচ বেশি হয়। কিন্তু গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতে বিস্তীর্ণ ভৌগোলিক পরিধির বিশাল জনসমষ্টির উপর গবেষণার সময় ও খরচ কম হয়।
    স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের সকল উপাদানের সম্পূর্ণ তালিকা দরকার হয়। অন্যদিকে, গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতে গুচ্ছ নির্বাচন সমগ্রকের সকল উপাদানের তালিকা দরকার হয় না।
    উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, নমুনায়ন পদ্ধতির দ্বারা গবেষণাকে সাশ্রয়ী, সরল ও মিতব্যয়িতা করে তোলে। স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়ন এর মধ্যে পার্থক্যকে বিবেচনা করে যেখানে যে রকম নমুনায়ন ব্যবহার করা দরকার তা ব্যবহার করে সঠিক গবেষণা পরিচালনা করা যায়।