অথবা, চার্বাকরা আত্মা সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন?
অথবা, চার্বাক আত্মতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাকরা আত্মাতত্ত্ব কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : অধিবিদ্যা হলো অতীন্দ্রিয় জগতের জ্ঞান যা পরমসত্তা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে। কিন্তু চার্বাকরা বলেছেন, যা প্রত্যক্ষ করা যায় না তার জ্ঞান অসম্ভব। এজন্য চার্বাকরা বলেছেন, কেবল অভিজ্ঞতার জগতের জ্ঞানই সম্ভব। অভিজ্ঞতার জগতের বাইরে অতীন্দ্রিয় জ্ঞান বা পরমসত্তা বলে কিছু নেই। চার্বাক অধিবিদ্যা জগৎ, আত্মা ও ঈশ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আত্মা সম্পর্কে চার্বাকদের মতামত : ভারতীয় এবং চার্বাকদের অনেকেই মনে করেন যে, মানবদেহে আত্মা নামক একটি অবিনাশী নিত্য সত্তা রয়েছে, যা দেহ ও মনকে পরিচালিত করে এবং যার প্রধান গুণ হচ্ছে চেতনা। কিন্তু চার্বাকরা এরূপ কোন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কেননা তাদের মতে, আত্মাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, প্রত্যক্ষণই যদি জ্ঞানের একমাত্র উৎস হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ বলে এক ধরনের প্রত্যক্ষণ থাকতে পারে, যা আমাদের মানসিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করবে এবং আমরা এর সাহায্যে সচেতনাকে প্রত্যক্ষ করতে পারবো, যাকে এ বস্তুজগতে প্রত্যক্ষ করা যায় না। এ ধরনের প্রত্যক্ষণ যদি থেকে থাকে তাহলে আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে যে, আমাদের মধ্যে অবস্তুগত বা আধ্যাত্মিক সত্তা রয়েছে, যার গুণ হচ্ছে চেতনা। এ সত্তাই হলো আত্মা। চার্বাকরা বলেছেন, মানুষ যাকে আত্মা বলে তা চেতনাবিশিষ্ট দেহ ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে চার্বাকরা দেখান যে, দেহ ও আত্মা অভিন্ন। দেহ ও আত্মা যে অভিন্ন এ সম্পর্কে তারা বলেছেন, যখন আমরা বলি যে, আমি অসুস্থ, আমি অন্ধ, তখন ‘আমি’ তে আত্মা আর দেহের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। চার্বাকরা বলেছেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চতুর্ভূতের সমন্বয়ে মানব দেহ সৃষ্টি হয়েছে যার প্রধান গুণ হচ্ছে চেতনা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এ চার প্রকার উপাদানের মধ্যে কোন চেতনা প্রত্যক্ষ করা যায় না। তাহলে তা
কিভাবে মানবদেহে চেতনার সৃষ্টি করতে পারে? এর উত্তরে চার্বাকরা বলেছেন, কোন উপাদানের মধ্যেই চেতনা নামক গুণটি নেই কিন্তু যখনই এ চার প্রকার উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে তখনই চেতনার উদ্রেক হয়। এ প্রসঙ্গে তারা একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেন। যেমন – পান, সুপারি এবং চুন । এ তিনটি বস্তুর কোনটির মধ্যেই লাল রং নেই। তবুও এ তিনটি বস্তুকে একসঙ্গে চর্বণ করলে লাল রং দেখা যায়। এভাবে চার্বাকরা দেখান যে, চেতনা জড়ের সৃষ্টি এবং দেহ ছাড়া এর কোন অস্তিত্ব প্রমাণ করা যেহেতু অসম্ভব, সেহেতু আত্মার অমরত্বও অসম্ভব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আত্মার অস্তিত্ব কখনো প্রমাণ করা যায় না। কারণ দেহের মৃত্যুর সাথে সাথে আত্মারও বিনাশ ঘটে। ফলে পূর্বজন্ম, পরজন্ম, কৃতকর্মের ফল ভোগ, স্বর্গ নরক প্রভৃতি অর্থহীন হয় পড়ে। এভাবে দেহে দেহাতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্ব এবং আত্মার অমরত্বকে অস্বীকার করে তারা তাদের অধিবিদ্যক অস্বীকৃতিকে প্রমাণ করেছেন।