অথবা, আল-গাজালির আত্মাতত্ত্ব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, আত্মা সম্পর্কে আল-গাজালির মতবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আল-গাজালির আত্মতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
অথবা, আল-গাজালির আত্মতত্ত্ব সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আল-গাজালি ছিলেন একাধারে ধর্মতাত্ত্বিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, কবি, সুফি সাধক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি ইসলামের সর্বশ্রেষ্ট ব্যাখ্যা এবং রক্ষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আল-গাজালির দার্শনিক চিন্তাধারার মূল্য লক্ষ্য ছিল ইসলামকে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস হতে রক্ষা করা। জাগতিক সাফল্য এবং বস্তুবাদী চিন্তাধারার বিকাশের ফলে মুসলমানদের ভিতর পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ইমাম গাজালি যুক্তির দ্বারা এবং নিজের ইমামি Spirit বা শক্তির দ্বারা মুসলিম সমাজকে জাগ্রত করতে প্রয়াসী ছিলেন। আর তাই আমরা দেখি যে, তিনি কেবল উপদেশ দেন নি বরং নিজ জীবনে তা পালন করেও দেখিয়েছেন।
আত্মা সম্পর্কে আল-গজ্জালির মত : আত্মা সম্পর্কে আল-গাজালি বলেন, মানবাত্মা পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্ট.জীব তথা জাগতিক জিনিস থেকে পৃথক। দৈহিক গুণাবলির মাধ্যমে আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় না। স্বরূপগত দিক.থেকে আত্মা অপরিহার্যরূপে আধ্যাত্মিক। আত্মাকে দেহের ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য ‘ক্যাটাগরি’র উপর আরোপ করা যায় না। এটি আধ্যাত্মিক দ্রব্য (যত্তহার রুহানী) আত্মার অবস্থান দেহের মধ্যেও নয়, আবার দেহের বাইরেও নয়। অর্থাৎ আত্মা
মানুষের দেহস্থিত হয়েও বস্তুজগতের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ আত্মা অশরীরীয়। আত্মাকে দেশ কালের ফ্রেমে আবদ্ধ করা যায় না। জাগতিক জিনিস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের ‘ক্যাটিগরি’র প্রেক্ষিতে আত্মাকে বুঝা যায় না। কাজেই বস্তুর সংজ্ঞা ও স্বরূপের মাধ্যমে আত্মার স্বরূপ জ্ঞাত হওয়া যায় না।
আত্মা খোদার সৃষ্টি : অন্যান্য বস্তুর মত আত্মা খোদার সৃষ্টি, তবে আত্মা আধ্যাত্মিক জগতের অন্তর্ভুক্ত,ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐশী বা স্বর্গীয় জগৎ থেকে আত্মার উৎপত্তি হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
“আল্লাহ মানুষের মধ্যে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি প্রবিষ্ট করিয়াছেন।” এ থেকে বুঝা যায়, মানুষের আত্মা ঐশী শক্তির অধিকারী এবং আত্মা দেহ থেকে মুক্ত হতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। যাতে এর মূল উৎসস্থলে ফিরে গিয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। আল-গাজালি তাঁর মতের সমর্থনে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, “মহান আল্লাহ্ তাঁর নিজের
গুণে আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেছেন।” এ থেকে তিনি মানবাত্মার মধ্যে যে আল্লাহ্র গুণ ও ক্রিয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিফলন ঘটেছে সেটা বুঝাতে চেয়েছেন।
আত্মা সম্পর্কে দার্শনিক মত : দার্শনিকরা মনে করেন যে, মানবাত্মা কেবল জীবাত্মা নয়, জীবাত্মার বৈশিষ্ট্যগুলো জীব হিসেবে মানবাত্মার মধ্যেও বিদ্যমান থাকে। কিন্তু মানবাত্মা জীবাত্মা বা জীবনীশক্তি থেকে অতিরিক্ত শক্তির ধারক। দার্শনিকদের মতে, একমাত্র মানব আত্মাই বাকশক্তিসম্পন্ন । দার্শনিকগণ মানবাত্মার দু’ধরনের শক্তির কথা
বলেছেন সেগুলো হলো জ্ঞানশক্তি ও কর্মশক্তি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দার্শনিকদের মতে, আত্মা অমর এ মতের বিরুদ্ধে আল-গাজালি বলেন, শুধু আত্মাই নয়, দেহ ও অমর। জন্মকালে দেহ ও আত্মাকে যদি আল্লাহ মিলিত করে সৃষ্টি করতে পারে তাহলে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের সময় দেহ ও আত্মার পুনর্মিলন ও একই নতুন দেহ লাভ করবে। মানুষের অন্তঃসার তার আত্মা। আত্মা
জগতের অন্যান্য সবকিছু থেকে স্বতন্ত্র।