আত্মার প্রকৃতি বলতে কী বুঝ?

অথবা, আত্মার স্বরূপ কী?
অথবা, আত্মার প্রকৃতি কাকে বলে?
অথবা, আত্মার প্রকৃতি কী?
অথবা, আত্মার স্বরূপ বলতে কী বুঝ?
অথবা, আত্মার স্বরূপ কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
আল-ফারাবির দর্শনে আত্মাতত্ত্ব একটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আল-ফারাবির অধিবিদ্যক আলোচনায় আল্লাহতত্ত্ব, বিশ্বতত্ত্ব ও জ্ঞানতত্ত্বের পাশাপাশি আত্মাতত্ত্ব সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। প্রাচীন ও আধুনিক যুগের পাশ্চাত্য দার্শনিকেরা আত্মার প্রকৃতি, আত্মার কার্যাবলি, আত্মার অমরত্ব প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ফারাবির দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো মানবজীবনের মূলতত্ত্ব বিশ্লেষণ, সমাজজীবনে তার প্রতিষ্ঠা, বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ, পরিণামে ইহজীবনে সুখ ও পরজীবনে সার্বিক শান্তি লাভ।
আত্মার প্রকৃতি : আত্মার প্রকৃতি বর্ণনায় আল-ফারাবি কুরআনের সুরে সুর মিলিয়েছেন। কুরআনের ভাষায় আত্মা হলো আল্লাহর হুকুম বা আদেশ। আত্মা মৌলিক, অবিভাজ্য এবং অতীন্দ্রিয় সত্তা। জড় থেকে এটা ভিন্ন। বুদ্ধি আত্মার সাহায্যে জড়পদার্থ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ইচ্ছার স্বাধীনতার সৃষ্টি করতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে আত্মার অবস্থান হলো আলামে আমর এ। এর কোন আকার নেই, গতি ও স্থিতিতে তার কোন পরিবর্তন সাধিত হয় না। আলামুল মালাকুত এ আত্মা খোদার জয়গান করে। ফারাবি আত্মার প্রতিশব্দ হিসেবে কুরআনের মত বিভিন্ন স্থানে কালব, নাফস ও রুহ ব্যবহার করেছেন। আত্মার কোন আকার নেই এবং কালের গতি ও স্থিতিতে তার কোন পরিবর্তন হয় না। আত্মা অবিভাজ্য, মৌলিক এবং স্বচ্ছ; আত্মায় সাধনা বলে খোদার গুণাবলি প্রতিফলিত হয়। এটা আয়নার স্বচ্ছতার
সাথে অনেকটা তুলনা করা যেতে পারে। বাইরের বস্তু যেমন পরিষ্কার আয়নাতে প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি পবিত্র আত্মায় আল্লাহর অনুকম্পা বর্ষিত হয়। রুহ-ই-কাদসিয়া, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবে পবিত্র আত্মা প্রভাবিত হয় না। দুর্বল আত্মার প্রকৃতি এমন যে, যখন বাহ্যিক বিষয়াদির প্রতি আকৃষ্ট হয় তখনও অন্তর্দৃষ্টি হয়, তখন আখেরাতের চিন্তাধারার অন্ত ধান ঘটে। মানুষ আত্মার সাধনা বলে ইহজগতের জড়পদার্থের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করে তাত্ত্বিক ও সাত্ত্বিক জগতের আস্বাদ লাভ করতে পারে। আত্মা অসংখ্য, তাই আত্মিক শান্তির ধারাও চিরন্তন। সব আত্মার শান্তির পরিমাণে আত্মার সমাবেশ বৃদ্ধি হলেও শান্তির প্রকৃতি, পরিমাণগত ও গুণগত তারতম্য থাকবে। জাগতিক শিল্পকলার মানের সাথে এটা অনেকটা তুলনীয়। প্রকৃত শিল্পীর সংখ্যা বাড়লে সার্বিকভাবে শিল্পের গুণগত মান বাড়বে। সার্বিকভাবে শিল্পের মান বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রতিটি শিল্পের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকবে। স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার প্রতিটি আত্মা পরকালে বিদ্যমান থাকবে। বিশ্ব আত্মার সাথে ব্যক্তি আত্মা মিলিত হলেও তার নিজস্ব প্রকৃতি হারাবে না। প্রতিটি ব্যক্তির আত্মাকে পর্যবেক্ষণ করে বলা হয়েছে যে যতটুকু কাজ করবে সে ততটুকু তার প্রতিদান পাবে। আল-ফারাবির আত্মা সম্পর্কে মতবাদ কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-ফারাবি ছিলেন মুসলিম দর্শনের পিরামিডস্বরূপ। আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি কুরআনের সুরে সুর মিলিয়েছেন। মূলত তিনি ছিলেন মানবদরদি ও কল্যাণকামী। আর এ কারণেই তিনি মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন ও বিশ্বব্যাপী কল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেছেন। সুতরাং মুসলিম দর্শনে তার অবদান অনস্বীকার্য।