আত্মার উপলব্ধি সম্পর্কে প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের মধ্যে পার্থক্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, আত্মার উপলব্ধি সম্পর্কে প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লেখ।
অথবা, প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের আত্মা সম্পর্কিত উপলব্ধির তুলনামূলক পার্থক্য লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি জৈমিনি। প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে মীমাংসা দর্শনের আর এক নাম ‘জৈমিনি দর্শন’। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্বকাণ্ড বা কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। আলোচনার সুবিধার্থে মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. নীতি ও
ধর্ম” (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। মীমাংসকগণ তাঁদের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় পদার্থ, জগৎ, শক্তি ও অপূর্ব এবং আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নে আত্মার উপলব্ধি সম্পর্কে প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো:
আত্মার উপলব্ধি সম্পর্কে প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের মধ্যে পার্থক্য : মীমাংসকরা বলেন, আত্মা অবিনাশী। মীমাংসকদের মতে, আত্মা নিষ্ক্রিয় এবং স্বরূপগত নির্গুণ। চৈতন্য আত্মার স্বরূপগত গুণ নয়, আগন্তুক গুণ। আত্মার সঙ্গে মনের, মনের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের এবং ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যখন বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটে, তখন আত্মায় চৈতন্যরূপ গুণের উদ্ভব হয়। আত্মার উপলব্ধি সম্পর্কে প্রভাকর এবং ভট্ট মীমাংসকদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ভট্ট-সম্প্রদায়ের মতে, আত্মা জ্ঞাতা, তবে মাঝে মাঝে জ্ঞেয়ও হয়। যখনই আমরা কোন বিষয়কে জানি তখনই আত্মাকে জানা যায় না; আত্মা তখন জ্ঞাতা। তবে যখন আমরা আত্মা সম্পর্কে চিন্তা করি তখন আত্মা আত্মচেতনার বিষয় হিসেবে জ্ঞাত হয়। ভট্ট-সম্প্রদায়ের এ মত প্রভাকর-সম্প্রদায় স্বীকার করেন না। প্রভাকর সম্প্রদায় বলেন, আত্মা জ্ঞাতা; এটি কোন অবস্থাতেই জ্ঞেয় হতে পারে না। একই মিষ্টি যেমন খাদ্য ও খাদক হতে পারে না তেমনি একই আত্মা জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় হতে পারে না। তবে প্রভাকর সম্প্রদায় এ কথা বলেন যে, কোন বিষয়কে জানার সময় আমাদের আত্মা প্রকাশিত হয়। যেমন- আমি যখন কোন একটি পটকে জানি তখন এ জ্ঞানের কর্তা হিসেবে আমার আত্মা প্রকাশিত হয়। কোন বিষয়কে জানার সময় যদি আত্মা প্রকাশিত না হয় তবে এক ব্যক্তির জ্ঞান হতে অপর ব্যক্তির জ্ঞানকে পৃথক করা যেতো না। এর উত্তরে ভট্ট-মীমাংসকগণ বলেন যে, প্রত্যেক বিষয় জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের কর্তারূপী আত্মার উপলব্ধি হয় না। তাঁদের মতে, আত্মাকে জানা যায় । অর্থাৎ আত্মা জ্ঞানের বস্তু হতে পারে। তা যদি না হয় তবে ‘আত্মাকে জান’-এ শ্রুতিবাক্য নিরর্থক হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় আত্মা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। তাইতো মীমাংসা দর্শনের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় আত্মা সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a6%be/