‘ আত্মবিলাপ ’ কবিতার মূলবক্তব্য তোমার নিজের ভাষায় লিখ ৷
অথবা , “ আশার পিছনে কালক্ষেপণ করে কবি যে করুণ জীবন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন ‘ আত্মবিলাপ ’ কবিতায় তারই প্রকাশ ঘটেছে । ” – এ উক্তির আলোকে কবিতাটির মূল বক্তব্য – তোমার নিজের ভাষায় লিখ ।
উত্তর : ‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ( ১৮২৪-১৮৭৩ ) আত্মোপলব্ধির চরম প্রকাশ বিশেষ । মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ব্যক্তিগত জীবনে উচ্চাশার বশবর্তী হয়ে নিজ দেশ , ধর্ম , সংস্কৃতি ও ভাষা পরিত্যাগ করে ভিন্ন ধর্ম , সংস্কৃতি ও ভাষাকে বরণ করেছিলেন । কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভেঙে যায় । তিনি মর্মে মর্মে বুঝতে পারেন যে তাঁর এ উচ্চাশা পোষণ অনুচিত ছিল । নিজের বিস্তৃত জীবনের ব্যর্থতার কারণসমূহ তিনি এ কবিতায় আক্ষেপের সাথে ব্যক্ত করেছেন । আশাবাদী মানুষের জীবন যন্ত্রণার স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে কবিতাটির প্রতি চরণে চরণে । জীবন – দর্শন এ কবিতার সবখানি জুড়ে আছে । জীবনবোধ এখানে প্রবলভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে ।
আশার পিছনে কালক্ষেপন করে কবি যে করুন জীবন – অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় তারই প্রকাশ ঘটেছে। আশার ছলনায় ভুলে কবি জীবনের অমূল্য সময় ব্যয় করেছেন। যখন তিনি জীবনের এ ফাঁকিটুকু বুঝতে পেরেছেন তখনই প্রশ্ন তুলেছেন –
“আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিনু, হায়,
তাই ভাবি মনে?
জীবন-প্রবাহ বহি কালসিন্ধু পেইন ধায়
ফিরাব কেমনে ?
দিন দিন আয়ুহীন, হীন বল দিন দিন ,……
তবু এ আশার নেশা ছুটিলনা, একি দায় !”
এ প্রশ্নের সাথে সাথে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, জীবনের প্রধান উপকরণ যে যৌবন তাওতো ফুরিয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রমত্ত মনকে ধিক্কার দিয়ে তিনি পুনরায় প্রশ্ন করেছেন-
“রে প্রমত্ত মন মম! কবে পোহাইবে রাত্রি ?
জাগে ফিরে কবে ?
জীবন-উদ্যানে তোর যৌবন-কুসুম ভাতি
কতোদিন রবে ?”
“মুক্তার লোভে ডুবুরি অতল জলে ডুব দিতে দিতে মহামূল্যবান আয়ু ফুরিয়ে ফেলে, কিন্তু মুক্তা পায় না। মানুষও তেমনি আশার কুহকে ভুলে গতায়ু হয়ে পড়ে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বস্তুর সন্ধান পায় না। কবি ডুবুরির ন্যায় সারাজীবন যত্রতত্র লাভের আশায় ডুবে ফিরেছেন। কিন্তু লাভ করতে পারেননি কিছুই। শেষ জীবনে দাঁড়িয়ে তাই তিনি নিজের প্রমত্ত মনের কাছে প্রশ্ন করেছেন। এ প্রশ্নের উত্তর তিনি তাঁর প্রশ্নের মধ্যেই রেখে গিয়েছেন। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁকে বিলাপ করতে বাধ্য করেছে। ব্যর্থ জীবনের দুর্বহ বোঝা বয়ে বেড়ানোই তাঁর সার হয়েছে। আশার পিছনে ছোটায় ভুলের মাশুল গুনতে গুনতে তিনি আজ ক্লান্ত, শ্রান্ত, ও বিধ্বস্ত। যে আশার পিছনে তিনি সারাটা জীবন ঘুরে বেড়িয়েছেন, সেই আশা পরিণামে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি তাঁকে। কবির এ তিক্ত ও নির্মম জীবন অভিজ্ঞতাই ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে। আশার মোহপাশে পড়ে মানুষ জীবনের অমূল্য সময় ক্ষয় করে ফেলে। সহজলভ্য সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যকে উপেক্ষা করে সোনার হরিণ পাওয়ার আশায় অনবরত ছুটে ছুটে যখন তার আয়ু শেষ হয়ে যায়, তখন বিলাপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তার। সুতরাং আশারূপী ছলনার কাছ থেকে দূরে থাকা সকলের একান্ত কর্তব্য।” তখন আক্ষেপ করে নিজের মনকে প্রশ্ন করেছেন –
“যশোলাভ লোভে আয়ু কতযে ব্যয়িলি হয়,
কব তা কাহারে ?
সুগন্ধ কুসুম-গন্ধে অন্ধ কীট যথা ধাঁই
কাটিতে তাহারে,
মাৎসর্য-বিশদশন, কামড়েরে অনুক্ষণ !
এই কি লভিলি লাভ , অনাহারে অনিদ্রায় ?”
এই কী লভিলি লাভ , অনাহারে অনিদ্রায় ? ” মুক্তার লোভে ডুবুরি অতল জলে ডুব দিতে দিতে মহামূল্যবান আয়ু ফুরিয়ে ফেলে কিন্তু মুক্তা পায় না । মানুষও তেমনি আশার কুহকে ভুলে গতায়ু হয়ে পড়ে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বস্তুর সন্ধান পায় না । কবি ডুবুরির ন্যায় সারাজীবন যত্রতত্র লাভের আশায় ডুবে ফিরেছেন । কিন্তু লাভ করতে পারেননি কিছুই । শেষ জীবনে দাঁড়িয়ে তাই তিনি নিজের প্রমত্ত মনের কাছে প্রশ্ন করেছেন । এ প্রশ্নের উত্তর তিনি তাঁর প্রশ্নের মধ্যেই রেখে গিয়েছেন । জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁকে বিলাপ করতে বাধ্য করেছে । ব্যর্থ জীবনের দুর্বহ বোঝা বয়ে বেড়ানোই তাঁর সার হয়েছে । আশার পিছনে ছোটায় ভুলের মাশুল গুনতে গুনতে তিনি আজ ক্লান্ত শ্রান্ত ও বিধ্বস্ত । যে আশার পিছনে তিনি সারাটা জীবন ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই আশা পরিণামে দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি তাঁকে । কবির এ তিক্ত ও নির্মম জীবন অভিজ্ঞতাই ‘ আত্মবিলাপ ‘ কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে । আশার মোহপাশে পড়ে মানুষ জীবনের অমূল্য সময় ক্ষয় করে ফেলে । সহজলভ্য সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যকে উপেক্ষা করে সোনার হরিণ পাওয়ার আশায় অনবরত ছুটে ছুটে যখন তার আয়ু শেষ হয়ে যায় তখন বিলাপ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তার । সুতরাং আশারূপী ছলনার কাছ থেকে দূরে থাকা সকলের একান্ত কর্তব্য ।