উত্তরঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার ব্যক্তিগত জীবনে উচ্চাশার প্রকাশের মাধ্যমে নিজ দেশ, ধর্ম, সংস্কৃতি, এবং ভাষা থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ভাষার সাথে একত্র হতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে তার ভুল ক্রমশঃ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তার উচ্চাশা পোষণের মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন যে এটি অপ্রয়োজনীয় ছিল। এর পরেও, বার বার ব্যর্থতা অভিজ্ঞ করার পরেও, মানুষ আশার কৌশলে আশাবাদী হতে চান। মণি মুক্তার লোভে জেলে সমুদ্রের অতলে ডুবার মতো, তার জীবনে যোগাযোগ অনবরত থাকতে থাকতে সে অবশ্যই আশা ছাড়ায় না। আশার কুহকে পড়ে সে নিজেকে নিঃশেষে করতে থাকে, এটি তার অগৌরবের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় কবির জিজ্ঞাসাগুলি হল:
১. জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য:
- “আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু, হায়, তাই ভাবি মনে?”
- “এ কি দায়! রে প্রমত্ত মন মম! কবে পোহাইবে রাতি?”
- “জীবন-উদ্যানে তোর যৌবন-কুসুম-ভাতি কত দিন র’বে?”
প্রেমের প্রকৃতি ও পরিণাম:
“প্রেমের নিগড় গড়ি পরিলি চরণে সাধে কী ফল লভিলি?”
“জ্বলন্ত-পাবক-শিখা-লোভে তুই কাল ফাঁদে উড়িয়া পড়িলি”
“পতঙ্গ যে রঙ্গে ধায়, ধাইলি, অবোধ, হায়! না দেখলি না শুনিলি, এবে রে পরাণ কাঁদে!”
আশার প্রতারণা:
- “নীরবিন্দু, দূর্বাদলে, নিত্য কিরে ঝলঝলে?”
- “কে না জানে অম্বুবিম্ব অম্বুমুখে সদ্যঃপাতি?”
- “মরীচিকা মরুদেশে, নাশে প্রাণ তৃষাক্লেশে”
- “এ তিনের ছল সম ছল রে এ কু-আশার।”
জীবনের বাস্তবতা:
“দিন-দিন আয়ুহীন হীনবল দিন-দিন ,– তবু এ আশার নেশা ছুটিল না ?”
“ক্ষণপ্রভা প্রভা-দানে বাড়ায় মাত্র আঁধার পথিকে ধাঁদিতে!”
“মাৎসর্য-বিষদশন, কামড়ে রে অনুক্ষণ!”
“ফিরি দিবি হারাধন, কে তোরে, অবোধ মন, হায় রে, ভুলিবি কত আশার কুহক-ছলে!”
এই জিজ্ঞাসাগুলির মাধ্যমে কবি জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার সন্দেহ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
কবি মানুষের এ বোকামির কারণে কষ্ট পেয়ে বলেছেন
“ মুকুতা ফলের লোভে ডুবেরে অতল জলে
যতনে ধীবর ,
শতমুক্তাধিক আয়ু কালসিন্ধু জল তলে
ফেলিস পামর !
ফিরি দিবে হারাধন , কে তোরে , অবোধ মন
হায়রে , ভুলিবি কত আশার কুহক ছলে ? ”
এ ভুলের জন্য আমৃত্যু কবি অনুতাপ করে গিয়েছেন । মানুষের এ ভুলকে তিনি সহজভাবে নিয়ে ক্ষমা করতে পারেন নি । তিনি আক্ষেপ করে নিজেকে প্রশ্ন করেছেন
“ রে প্রমত্ত মন মম ! কবে পোহাইবে রাতি ?
জাগিবিরে কবে ?
মূলত, কবি ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় তার নিজের অতীত কর্মের প্রতি বিলাপ করেছেন এবং একই সাথে তা থেকে উত্তরণের পথের সন্ধান করেছেন। সংশয়চিত্তে, কবি প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করেছেন যে, তার মুক্তি কোন সময় এবং কীভাবে সম্ভব হতে পারে।