উত্তরঃ “আত্মবিলাপ” কবিতায়, কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার হাহাকারের স্বরূপে বেদনাজর্জরিত হওয়ার মাধ্যমে তার আত্মা উন্মোচন করেছেন। তার জীবনের এক মৌল্যবান সময়ে, যশ এবং খ্যাতির প্রত্যাশায় তিনি ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন। তিনি যাত্রা করেছেন প্রভৃতি, দেশ, ভাষা, এবং সংস্কৃতির মধ্যে অভিজাত উন্নত সাহিত্য এবং সংস্কৃতির চর্চার পথে, কিন্তু তার প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। তার জীবনে ছোটাছুটির কারণে তার আয়ু ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিখ্যাত কবিতা “আত্মবিলাপ”-এর মর্মবেদনা হলো জীবনের প্রতি কবির হতাশা ও বিরক্তি।
এই হতাশা ও বিরক্তির কারণগুলি হলো:
- প্রেমে ব্যর্থতা: কবিতার ‘আমি’ চরিত্রটি তার প্রেমিকা কাছে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়, যার ফলে তার মনে তীব্র বেদনা জাগে।
- জীবনের অর্থহীনতা: কবি জীবনের কোন সারবস্তু খুঁজে পান না, তাই জীবন তাকে মনে হয় ‘অসার’ ও ‘ব্যর্থ’।
- সমাজের প্রতি অসন্তোষ: কবি সমাজের কৃত্রিমতা ও pretension-কে ঘৃণা করেন এবং সমাজের প্রতি তার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
- আশার ছলনা: কবি জীবনে বারবার আশা পোষণ করেছেন, কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে তার মনে আশার প্রতি বিশ্বাস লোপ পেয়েছে।
সে কথাটাই তিনি বলেছেন
“ দিন দিন আয়ুহীন হীন বল দিন দিন
তবু এ আশার নেশা ছুটিল না , একি দায় । ”
কিন্তু আশা তবুও মানুষের পিছু ছাড়ে না । বিস্তৃত জীবন থেকে যৌবন ফুরিয়ে এলেও ভ্রান্তি তবু দূর হয় না । কেবল না পাওয়ার বেদনায় ভারাক্রান্ত মন তখন আপসোস্ করে বলে উঠে
“ নারিলি হরিতে মণি দংশিল কেবল ফণী
এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি মন কেমনে ? ”
ভালো কিছু লাভের আশায় জীবন বিপন্ন করেও কবি ব্যর্থমনোরথ হয়ে এ মর্মবেদনার জ্বালায় জ্বলে মরেছেন । এ বেদনা তাঁকে অহর্নিশি তাড়িয়ে ফিরেছে । এর থেকে মুক্তি মেলেনি ।
উপসংহার: “আত্মবিলাপ” কবিতাটি কবির ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি থেকে উৎসারিত। এই কবিতায় কবি জীবনের প্রতি তার হতাশা ও বিরক্তির মর্মস্পর্শী চিত্রায়ণ করেছেন।