অথবা, আইন বিভাগ শাসন সংক্রান্ত কী কী কাজ সম্পাদন করে? আলোচনা কর।
অথবা, আইন বিভাগের প্রশাসনিক সংক্রান্ত কার্যাবলি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র বহুবিধ কাজ সম্পন্ন করে থাকে। সরকারের দ্বারাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদিত হয়ে থাকে। সরকারের এ কাজগুলো মূলত তিনটি বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সরকারের প্রতিটি বিভাগ তাদের স্ব-স্ব কার্যাবলি সম্পন্ন করেও আইন বিভাগ শাসন সম্পর্কিত এবং শাসন বিভাগ আইন সম্পর্কিত নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে থাকে।
আইন বিভাগের শাসন সম্পর্কিত ও শাসন বিভাগের আইন সম্পর্কিত কার্যাবলি : আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং তাদের কার্যাবলিও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা যাহোক না কেন, কোন সরকার ব্যবস্থায়ই আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগকে পূর্ণাঙ্গভাবে পৃথক করা সম্ভব হয় নি। রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধি পাওয়ায় আইন বিভাগ শাসন বিভাগ সম্পর্কিত কাজ এবং শাসন বিভাগ আইন বিভাগ সম্পর্কিত কাজ সম্পাদন করে থাকে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
আইন বিভাগের শাসন সম্পর্কিত কাজ : আইন বিভাগের শাসন সম্পর্কিত কাজগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. শাসন বিভাগ গঠন : আইনসভা শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শাসন বিভাগের প্রকৃত কর্ণধার হলো আইনসভা বা মন্ত্রিসভা। এ মন্ত্রিসভার নেতা প্রধানমন্ত্রীসহ সকল সদস্য বা মন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্য থেকে আসে। তাই
আইনসভাই প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগের সুব্যবস্থা করে থাকে।
২. শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ: আইন বিভাগের অন্যতম প্রধান কাজ হলো শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। আইন ও শাসন বিভাগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন অনুসারে শাসন বিভাগ দেশ চালায় আইনি বিভাগ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে পারে। তার মধ্যে আলোচনা, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, বিতর্ককালে উত্থাপিত প্রস্তাব, তদন্ত কমিশন গঠন ইত্যাদি প্রধান।
৩. শাসন সংক্রান্ত কাজ : আইন বিভাগ অনেক সময় অনেক দেশে শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলিও সম্পন্ন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের কথা বলতে পারি। কেননা সিনেট যুদ্ধ ঘোষণা, শান্তি স্থাপন, চুক্তি, সন্ধি এবং উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগের অনুমোদন করে থাকে।
৪. বৈদেশিক নীতিনির্ধারণী কাজ : শাসন বিভাগের বৈদেশিক নীতিনির্ধারণের ব্যাপারে আইন বিভাগের অনুমোদন দরকার। অর্থাৎ আইন বিভাগ শাসন বিভাগের নীতিনির্ধারণী কাজ সম্পন্ন করে থাকে। আমেরিকায় বৈদেশিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সিনেটের সম্মতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
৫. সামরিক সংক্রান্ত কাজ : শাসন বিভাগের যুদ্ধ সংক্রান্ত কার্যাবলিও আইনসভা তত্ত্বাবধান করে থাকে। আমেরিকায় যুদ্ধ ঘোষণা ও সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের আদেশ রাষ্ট্রপতি দিলেও এ আদেশ কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষ।
৬. সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ : শাসন বিভাগের অন্যতম কাজ হলো সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ দান করা।কিন্তু অনেক সময় আইনসভা সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগদান করে থাকে। মার্কিন কংগ্রেস এর উচ্চকক্ষ সিনেটের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগদান করেন।
৭. অর্থ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ : শাসন বিভাগের অর্থ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজও আইন পরিষদ তদারকি করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসে অর্থ মঞ্জুরির প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসই মূলত কর ধার্য ও অর্থ মঞ্জুর করার মালিক।
৮. সন্ধি বা চুক্তি অনুমোদন : শাসন বিভাগের সন্ধি বা চুক্তি অনুমোদনমূলক কাজও আইন পরিষদ সম্পাদন করে। থাকে। সিনেটের অনুমোদন ছাড়া আমেরিকায় কোন সন্ধি বা চুক্তি সম্পাদন এবং কার্যকরী করা যায় না। বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯২০ সালে জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর দান করেন, কিন্তু সিনেটের অনুমোদন না থাকায় তিনি তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন ।
উপসংহার : আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের যাবতীয় কার্যসম্পাদনে আইনসভার ভূমিকা খুব বেশি। বর্তমানে সরকারের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আইনসভা কিছু কিছু শাসন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যার মাধ্যমে আইনসভার দক্ষতার পরিচয় মেলে।