উত্তর: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারণাদ্বয়কে অনেকেই প্রায় ক্ষেত্রে একই অর্থে ব্যবহার করেন। কিন্তু সঠিক অর্থে এ দুটি ধারণার মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও এ দু’টি ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
■ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic Growth) : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কোন দেশের নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদন বৃদ্ধির হারকে বুঝায়। অর্থনৈতিক শক্তিসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দ্বারা মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলে তাকে প্রবৃদ্ধি বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে কোন দেশের দ্রব্য সেবার চলমান বৃদ্ধিকে বুঝায়। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি যা GNP বা NNP এর সাহায্যে পরিমাপ করা হয় তাকেই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বলা হয়।
□ প্রামাণ্য সংজ্ঞা: প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন।
মিসেস হিক্স বলেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে অধিক উৎপাদনকে বুঝায়।”
ফিলিস ডিন (Phillis Deane) এর মতে, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে জাতীয় আয়ের অব্যাহত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া যার দ্বারা জাতীয় আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথা পিছু আয়ও বৃদ্ধি পেতে থাকে।”
অধ্যাপক জে. এ. স্যামপিটার-এর মতে, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি অব্যাহত ও ধীর প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে। এগুতে থাকে। এভাবে জনসংখ্যা ও সঞ্চয় হারের সাধারণ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোন অর্থনীতির দীর্ঘকালে ক্রমিক এবং স্থির পরিবর্তন সাধিত হলে তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে।”
অধ্যাপক র্যাগন (Ragan) এবং থমাস (Thomas) এর মতে, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে অর্থনৈতিক সামর্থ্যে দ্রব্য এবং সেবা উৎপাদনের সুদীর্ঘ ব্যাপ্তি। এটি দ্বারা কোন জাতির উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা এবং সামগ্রিক যোগান রেখার নিরবচ্ছিন্ন ডানমুখী (উর্ধ্বমুখী) স্থানান্তর বুঝায়।”
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি পরিমাণগত ধারণা। এটি শ্রম শক্তির প্রসার, পুঁজি, ব্যবস্য ও ভোগের বৃদ্ধিকে বুঝায় যায় লক্ষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি।
অতএব বলা যায়, কোন দেশে একটি সুনিদিষ্ট সময়ে জাতীয় উৎপাদন ও মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের বার্ষিক পরিবর্তনের হার বা চলমান বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে।
প্রকারভেদঃ প্রবৃদ্ধি তিনভাবে পরিচালিত হতে পারে। যথাঃ
১। জাতীয় আয়ের একই হারে বৃদ্ধি।
২ । জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি।
৩। জাতীয় আয়ের ক্রমহ্রাসমান হারে বৃদ্ধি।