অথবা, যে কোন অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলো কি কি?
অথবা, কোন সমাজের মৌলিক অর্থনীতিক সমস্যাসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : প্রারম্ভিক কথাঃ মানুষের জীবনে অভাবের কোন শেষ নেই। একটি বিশেষ অভাব শেষ হলে অপর একটি অভাব দেখা দেয়। এ অর্থে অভাব অসীম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, অসীম অভাব পূরণের জন্য যে সম্পদের প্রয়োজ। তা খুবই সীমিত। আর এর ফলে সকল সমস্যার উদ্ভব হয়। এক কথায় সম্পদের অপ্রতুলতা/অপ্রাচুর্যতা/ দু”হ্লাপ্যতাই মানব জীবনে সকল অর্থনৈতিক সমস্যার মূল কারণ।
অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাঃ সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা তথা সীমাবদ্ধতার কারণে মানব সমাজে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তাদেরকে মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা বলা হয়। অধ্যাপক পি.এ. স্যামুয়েলসন্স অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে ৩টি মৌলিক প্রশ্ন আকারে সাজিয়েছেন। যেমন-
১. কি কি পণ্য কি পরিমাণ উৎপাদন করা হবে?
২. কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে?
৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে বা উৎপাদিত পণ্য কীভাবে বণ্টন করা হবে?
১. কি কি পণ্য কি পরিমাণ উৎপাদন করা হবে?
অভাবের তুলনায় সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষকে/সমাজকে প্রথমেই ঠিক করে নিতে হয়- কি কি পণ্য উৎপাদন করতে হবে। অভাব পূরণের জন্য হাজারো পণ্যের উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু সীমিত সম্পদের সাহায্যে একই সাথে সকল পণ্য উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে বাছাই করে নিতে হয়- কি কি পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উৎপাদন করতে হবে। এ সমস্যাটি উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
চিত্রে OX এবং OY অক্ষে যথাক্রমে X এবং Y পণ্যের উৎপাদন ধরা হয়েছে। AB একটি সম্ভাবনা উৎপাদন রেখা (Production Possibility Curv PPC)। সীমিত সম্পদের সাহায্যে OA পরিমাণ Y পণ্য অথবা OB পরিমাণ X:
পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। প্রশ্ন হল X এবং ১ এর মধ্যে কোন পণ্য উৎপাদন করা হবে আবার ১ বিন্দুতে Y পণ্যের
উৎপাদন বেশি এবং T’ বিন্দুতে X পণ্যের উৎপাদন বেশি। কাজেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় X এবং Y পণ্যের মধ্যে কোন
পণ্যটি অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা হবে।
২. কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে?
নির্বাচিত পণ্য কীভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে সমাজের নিকট তাও একটি মৌলিক নির্বাচন সমস্যা। উৎপাদনে ব্যবহৃত উপহরণসমূহ সীমিত বলেই এরূপ সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া কোন পণ্য উৎপাদনে একাধিক কৌশল বা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। তবে কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে তা নির্বাচন করাই হল সমস্যা। যেমন- ধান উৎপাদনের জন্য কোন জমিকে কাঠের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা যায়। আবার কলের লাঙ্গল (ট্রাক্টর) দিয়েও চাষ করা যায়।
প্রথম ক্ষেত্রে শ্রম বেশি লাগে আবার ২য় ক্ষেত্রে মূলধন বেশি লাগে। প্রশ্ন হল অধিক শ্রম নাকি অধিক মূলধন প্রয়োগে ধান উৎপাদন করা হবে। চিত্রে OX এবং OY অক্ষে যথাক্রমে শ্রম ও মূলধন ধরা হয়েছে। EP একটি সম- উৎপাদন রেখা যার সকল বিন্দুতে, উৎপাদন সমান। ২০ একক ধান উৎপাদনে A বিন্দুতে অধিক মূলধন এবং B বিন্দুতে অধিক শ্রম প্রয়োজন। OA হল পুঁজি নিবিড় কৌশল এবং OB হল শ্রম নিবিড় কৌশল। প্রশ্ন হল বা সমস্যা হল একক ধান উৎপাদনে কোন কৌশল প্রয়োগ করা হবে।
৩. কার জন্য উৎপাদন করা হবে বা উৎপাদিত পণ্য কীভাবে বণ্টন করা হবে?
সমাজের আরও একটি কেন্দ্রীয় বা মৌলিক সমস্যা হল পণ্য সামগ্রির বণ্টন সমস্যা। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি কীভাবে সমাজের মানুষের মধ্যে পৗঁছে যায় তার কৌশল নির্বাচন করতে হয়। বণ্টনে সমতা ও ন্যায়নীতি তথা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্চনীয়। কিন্তু প্রায়শই সমতা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে ন্যায় বিচার লঙ্গিত হয়। আবার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সমবণ্টন হয় না। সমস্যা হল কীভাবে সমবণ্টন ও ন্যায় বণ্টনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যায়।
চিত্রে OX অক্ষে গরিব শ্রেণী দ্রব্য, এবং OY অক্ষে গরিব শ্রেণী দ্রব্য। AB হল একটি সম্ভবনা উৎপাদন রেখা (Production Possibility Curve = PPC)। সমাজে যদি গরিব জনগোষ্ঠীর পরিমান অধিক হয় সেক্ষেত্রে AB রেখার R বিন্দুতে এবং ধনিক শ্রেণীর জনগোষ্ঠেীর পরিমান অধিক হলে AB রেখার M বিন্দুতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। R বিন্দুতে অধিক X এবং M বিন্দুতে অধিক Y দ্রব্য উৎপাদিত হয়।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) কোন কোন দ্রব্য সামগ্রি উৎপাদন করা হবে,
(২) কীভাবে উৎপাদন করা হবে,
(৩) কার জন্য উৎপাদন করা হবে।
সংক্ষেপে বলা যায়, কী উৎপাদন করা হবে, কিভাবে উৎপাদন করা হবে এবং কার জন্য উৎপাদন করা হবে এ তিনটিই আর্থনীতির মৌলিক সমস্যা।