উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু মননশীল প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচিত ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : সংস্কৃতি কী এবং তার উপকরণ কী কী সে সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে লেখক মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : সংস্কৃতি কী এবং কী কী উপকরণের সাহায্যে সংস্কৃতি গড়ে উঠে সে সম্পর্কে মতপার্থক্য আছে। তবে সংস্কৃতির পথ নিয়ে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন এর লক্ষ্য নিয়ে তেমন কোন মতপার্থক্য নেই। বরং এ ব্যাপারে সংস্কৃতিসেবী সব কর্মীরই লক্ষ্য অমৃত বা আত্মা। অমল আত্মার জ্যোতি থেকে ঠিকরে পড়া অমৃত পান করে তারা সকলেই হয়ে উঠতে চায় মহান। যীশুখ্রিস্ট যখন বলেন, “For what is man profited if he shall gain the whole world and lose his own soul?” তখন তিনি সংস্কৃতিবানের অন্তরের কথাই বলেন। এ খ্রিস্টবাণীরই ঔপনিষদিক ভাবান্তর হচ্ছে যা দিয়ে আমি অমৃত লাভ করব না তা দিয়ে কী হবে? সকল গরল মন্থন করে সংস্কৃতকামী পেতে চায় অমৃতকে। অমৃত আকাঙ্ক্ষাই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষ অমৃতকে কামনা, তথা প্রেমকে কামনা, সৌন্দর্যকে কামনা উচ্চতর জীবনকে কামনার নামই সংস্কৃতি। এজন্যই সংস্কৃতিকে একটা আলাদা ও উচ্চতর ধর্ম বলা হয়েছে। সংস্কৃতি আমাদেরকে ক্লান্ত ও মলিন জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়, যেখানে সুন্দর ও মহত্ত্বের সুবাতাস জীবনকে শ্রীময় করে তোলে। সংস্কৃতি মানুষের মনে এনে দেয় মুক্তির স্বাদ। এ মুক্তির জন্য
প্রয়োজন অমৃতের সাধনা, প্রেমের কামনা, সৌন্দর্যের সাধনা এবং উচ্চতর জীবনের আরাধনা। অমৃতের সাধনাই সংস্কৃতির চর্চা। এছাড়া সংস্কৃতিবান হওয়া যায় না। সংস্কৃতি চোখে দেখার বা হাতে ধরার বস্তু নয়- তা অনুভব ও উপলব্ধির বিষয়। তাকে লাভ করতে হলে সাধনার প্রয়োজন।
মন্তব্য: অমৃত, প্রেম ও সৌন্দর্যের সাধনা করেই সংস্কৃতিবান মানুষ উচ্চতর জীবন লাভে সমর্থ হয়।