অভিক্ষেপণ পদ্ধতি কাকে বলে

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অভিক্ষেপণ পদ্ধতি বলতে কী বুঝ?

অথবা, অভিক্ষেপণ পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর:

ভূমিকা :অভিক্ষেপণ পদ্ধতি হলো এমন একটি পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতি, যেখানে গবেষণার্থীরা প্রাচীন সময়ের যুগপুরুষের জীবনবৃত্তান্ত, ঐতিহ্য, ও সংস্কৃতির মধ্যে অদৃষ্টপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে সংজ্ঞা করে। এই পদ্ধতিতে মুখ্যভাবে ঐতিহাসিক দস্তাবেজ, প্রাচীন লেখা গ্রন্থ, চিত্রকলা, মূর্তিশিল্প, ভাষা, সংগীত, ও অন্যান্য সংস্কৃতির অংশ সংগ্রহ করা হয় যাতে প্রাচীন সময়ের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি জানা যায়।

প্রক্ষেপণ বা অভিক্ষেপণ পদ্ধতি : প্রক্ষেপণ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীর ব্যক্তিত্বকে পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে একটি অসংগঠিত, অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট উদ্দীপকের সামনাসামনি হাজির করা হয়। এতে ব্যক্তিকে কতকগুলো কালির ছাপ প্রদর্শন করানো হয় এবং তার উপর মস্ত ব্য করতে বলা হয়। প্রক্ষেপণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা এবং কাহিনী সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা। নিম্নে এই দু’টি অভীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা : সুইজারল্যান্ডের মনোচিকিৎসক হারম্যান রোশাক ১৯২১ সালে এই অভীক্ষাটি তৈরি করেন। নানা প্রকৃতি ও রঙের ১০টি কালির ছাপ বিশিষ্ট কার্ড নিয়ে এ অভীক্ষাটি গঠিত। উদ্ভাবকের নামানুসারে এই অভীক্ষাটি রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা নামে পরিচিতি। রোশাক অভীক্ষার ১০টি কালির ছাপের মধ্যে ৫টি কালো ও ধূসর বর্ণের, ২টি কালো ও লাল বর্ণের, এবং বাকি তিনটি অন্যান্য বর্ণের। কার্ডগুলো ১ হতে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। কার্ডগুলোর কালির ছাপ প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন, কিন্তু এমন প্রকৃতির যে সেগুলোকে যেমন খুশি তেমনভাবে প্রত্যক্ষণ করা যায়। পরীক্ষণপাত্রকে এক একটি করে কার্ড দেওয়া হয় এবং কার্ডে সে কি দেখেছে তা বলতে বলা হয়। কার্ডগুলো দেখার সময় পরীক্ষণপাত্র যতক্ষণ খুশি এবং যেভাবে ইচ্ছা দেখতে পারে। তবে প্রতিটি কার্ড দেখতে কতক্ষণ সময় লাগে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এভাবে পরীক্ষণপাত্রকে ১০টি কার্ড দেখানো শেষ হলে তাকে দ্বিতীয়বার কার্ডগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কার্ডের কোন কোন অংশ দেখেছে তা নির্দেশ করতে বলা হয়। পরীক্ষণপাত্রের উত্তরসমূহ তিনটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। যথা :

ক. পরীক্ষণপাত্র সমগ্র ছবিটি বর্ণনা করেছে না কি ছবিটির অংশবিশেষ বর্ণনা করেছে : কোন ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণ ছবির উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝা যাবে, সে বিমূর্ত চিন্ত ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পছন্দ করে। আর যদি সে অংশবিশেষের উপর গুরুত্ব প্রদান করে থাকে, তাহলে বুঝা যাবে, সে খুঁটিনাটি বা সামান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে।

খ. ছবির আকৃতি, রং বা অন্যকিছুর দ্বারা তার প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে কি না : কোন ব্যক্তি যদি ছবির রংয়ের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে অসংযত আবেগ রয়েছে। কিন্তু সে যদি রং এবং আকৃতি উভয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তাহলে বুঝা যাবে, তার আবেগের প্রকৃতি বা ধরন অবাধ এবং সাবলীল ।

গ. পরীক্ষণপাত্র এ ছবিগুলোকে কি হিসেবে দেখেছে : ব্যক্তি যদি মানুষের ছবি বা গতিশীল মানুষের ছবি দেখে থাকে, তবে তার অধিক বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যাবে। আর যদি সে জীবজন্তুর ছবি দেখে থাকে, তবে বুঝা যাবে তার চিন্তার পরিধি খুবই সীমিত।

২. কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা : ১৯৩৫ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী মারে (Murry) ও মর্গান (Morgan) সর্বপ্রথম কাহিনী সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা উদ্ভাবন করেন। এ অভীক্ষায় মোট ২০টি কার্ড থাকে। এর মধ্যে ১৯টি কার্ড ছবিযুক্ত এবং বাকি একটি কার্ড শুধু ফাঁকা বা সাদা থাকে। পরীক্ষণপাত্রকে এ অভীক্ষায় প্রতিটি ছবিযুক্ত কার্ড দেখে একটি কাহিনি রচনা করতে বলা হয়। কাহিনি লেখার ধারা হবে ছবিটিতে কি দেখা যাচ্ছে, কি ঘটেছে, ছবিতে লোকগুলো কি ভাবছে, কিভাবে কাহিনি সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর পরিণতি কি হবে। পরীক্ষণপাত্র প্রতিটি ছবি থেকে একটি করে গল্প বা কাহিনি লেখার পর তাকে ফাঁকা বা সাদা কার্ডটি দেয়া হয়। পরীক্ষণপাত্রকে সাদা কার্ডে একটি ছবি কল্পনা করে নিয়ে সে সম্পর্কে তাকে একটি কাহিনি লিখতে বলা হয়।

পরীক্ষক গল্পের মূল বিষয়বস্তু আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন এবং তা থেকে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রেষণা ও দ্বন্দ্বসমূহ অনুসন্ধান করেন। পরীক্ষণপাত্র ছবিগুলো দেখে যেসব গল্প রচনা করে, তার সাহায্যে পরীক্ষক পরীক্ষণপাত্রের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেষণা, মনোভাব, কল্পনাশক্তি, আবেগ, প্রত্যক্ষণ, দৃষ্টিশক্তি প্রভৃতি বিষয় জানার চেষ্টা করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ণয় করেন।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ হলেও এতে ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়া এতে অভীক্ষার্থী মিথ্যা, দুর্নীতি, এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে পারে না। তাই কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সকলের নিকট সমাদৃত। অতএব বলা যায়, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রক্ষেপণমূলক অভীক্ষা খুবই গুরুত্ব বহন করে।