অপরাধ (Crime) এবং বিচ্যুতি (Deviance) সমাজবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও তাদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
মূল পার্থক্যটি হলো: সকল অপরাধই বিচ্যুতি, কিন্তু সকল বিচ্যুতি অপরাধ নয়।
নিচে একটি তুলনামূলক ছকের মাধ্যমে এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
পার্থক্যকারী বিষয় | বিচ্যুতি (Deviance) | অপরাধ (Crime) |
সংজ্ঞা ও ভিত্তি | সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, মূল্যবোধ, প্রথা ও প্রত্যাশার পরিপন্থী আচরণ। | দেশের প্রণীত ফৌজদারি আইন বা বিধিনিষেধের লঙ্ঘন। |
আইনগত বৈধতা | সাধারণত আইন দ্বারা নিষিদ্ধ নয় বা বেআইনি কাজ নয়। | আইন দ্বারা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ও বেআইনি কাজ। |
শাস্তির প্রকৃতি | এর জন্য আইনগত শাস্তি (যেমন: জেল, জরিমানা) পেতে হয় না। শাস্তি সাধারণত সামাজিক হয় (যেমন: নিন্দা, তিরস্কার, সমাজচ্যুতি বা সামাজিকভাবে এড়িয়ে চলা)। | এর জন্য আইনগত শাস্তি (যেমন: জেল, জরিমানা, মৃত্যুদণ্ড) ভোগ করতে হয়। শাস্তি নির্ধারণ করে আইন ও বিচার ব্যবস্থা। |
ক্ষেত্র বা পরিধি | এর ক্ষেত্র ব্যাপক ও বৃহত্তর। সমাজের প্রায় সমস্ত অপ্রত্যাশিত আচরণই এর অন্তর্ভুক্ত। | এর ক্ষেত্র সীমিত ও সংজ্ঞায়িত। শুধু আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় কাজগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। |
সময় ও স্থানের প্রভাব | এটি আপেক্ষিক। সংস্কৃতি, সময়, স্থান ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ভেদে বিচ্যুতির ধারণা পরিবর্তিত হতে পারে। (যেমন: বহু আগে বিধবা বিবাহ বিচ্যুতি ছিল, এখন নয়)। | এটিও আপেক্ষিক হলেও বিচ্যুতির তুলনায় কম আপেক্ষিক। অপরাধের সংজ্ঞা সাধারণত দেশের আইনে সুনির্দিষ্টভাবে লেখা থাকে। |
উদাহরণ | বড়দের সম্মান না করা, ট্রাফিক নিয়মের ছোটখাটো লঙ্ঘন (যেমন: জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হওয়া), প্রকাশ্য স্থানে জোরে কথা বলা, মাতাল হওয়া (যদি তা আইন লঙ্ঘন না করে)। | চুরি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, জালিয়াতি, অপহরণ, মাদকদ্রব্য পাচার। |
সারসংক্ষেপ:
অপরাধ হলো বিচ্যুতির একটি বিশেষ রূপ। যখন কোনো বিচ্যুতিমূলক আচরণ সমাজের আইন দ্বারা দণ্ডনীয় বলে বিবেচিত হয়, তখনই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। অন্যদিকে, যখন কোনো আচরণ শুধু সামাজিক রীতিনীতি বা মূল্যবোধের পরিপন্থী হয়, কিন্তু আইন ভঙ্গ করে না, তখন তা কেবল বিচ্যুতি হিসেবেই পরিচিত।
অপরাধ এবং বিচ্যুতি সমাজবিজ্ঞান এবং আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি সম্পর্কিত কিন্তু ভিন্ন ধারণা। নিচে এদের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হলো:
১. সংজ্ঞা:
- অপরাধ (Crime): অপরাধ হলো এমন কোনো কাজ বা আচরণ যা রাষ্ট্রের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ এবং যার জন্য আইনি শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি সাধারণত সমাজের প্রতিষ্ঠিত আইনের লঙ্ঘন। উদাহরণ: চুরি, হত্যা, ধর্ষণ।
- বিচ্যুতি (Deviance): বিচ্যুতি হলো এমন আচরণ বা কাজ যা সমাজের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, মূল্যবোধ বা প্রথার সাথে সাংঘর্ষিক। এটি অগত্যা আইনি লঙ্ঘন নাও হতে পারে। উদাহরণ: অশোভন পোশাক পরা, অস্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
২. আইনি দৃষ্টিকোণ:
- অপরাধ: অপরাধ সরাসরি আইনের সাথে সম্পর্কিত। এটি রাষ্ট্রের ফৌজদারি আইনের অধীনে বিবেচিত হয় এবং এর জন্য শাস্তি (জরিমানা, কারাদণ্ড) নির্ধারিত থাকে।
- বিচ্যুতি: বিচ্যুতি সবসময় আইনি লঙ্ঘন নয়। এটি সমাজের সাংস্কৃতিক বা সামাজিক নিয়মের লঙ্ঘন হতে পারে, যার জন্য আইনি শাস্তি নাও থাকতে পারে।
৩. সামাজিক প্রেক্ষাপট:
- অপরাধ: অপরাধ সাধারণত সমাজে গুরুতর ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। উদাহরণ: ডাকাতি।
- বিচ্যুতি: বিচ্যুতি সবসময় ক্ষতিকর নয়। কিছু বিচ্যুতি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, যেমন সামাজিক সংস্কারের জন্য প্রচলিত নিয়ম ভাঙা (উদাহরণ: সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলন)।
৪. শাস্তি ও নিয়ন্ত্রণ:
- অপরাধ: অপরাধের জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়, যেমন পুলিশ, আদালত, কারাগার।
- বিচ্যুতি: বিচ্যুতির জন্য সামাজিক নিন্দা, বয়কট বা সমালোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেমন, কাউকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা।
৫. উদাহরণ:
- অপরাধ: একটি দোকানে চুরি করা (আইন ভঙ্গ)।
- বিচ্যুতি: পাবলিক প্লেসে চিৎকার করে গান গাওয়া (সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ, কিন্তু আইনি নয়)।
সারসংক্ষেপ:
- অপরাধ হলো আইনের লঙ্ঘন, যা রাষ্ট্রীয় শাস্তির আওতায় পড়ে।
- বিচ্যুতি হলো সামাজিক নিয়মের লঙ্ঘন, যা আইনি শাস্তির আওতায় নাও পড়তে পারে।
- সব অপরাধই বিচ্যুতি, কিন্তু সব বিচ্যুতি অপরাধ নয়।
এই পার্থক্য সমাজবিজ্ঞান এবং আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সমাজের নিয়ম ও আইনের ভূমিকা বোঝাতে সাহায্য করে।
অপরাধ (Crime) এবং বিচ্যুতি (Deviance) সমাজবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হলেও তাদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
মূল পার্থক্যটি হলো: সকল অপরাধই বিচ্যুতি, কিন্তু সকল বিচ্যুতি অপরাধ নয়।
নিচে একটি তুলনামূলক ছকের মাধ্যমে এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
পার্থক্যকারী বিষয় | বিচ্যুতি (Deviance) | অপরাধ (Crime) |
সংজ্ঞা ও ভিত্তি | সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, মূল্যবোধ, প্রথা ও প্রত্যাশার পরিপন্থী আচরণ। | দেশের প্রণীত ফৌজদারি আইন বা বিধিনিষেধের লঙ্ঘন। |
আইনগত বৈধতা | সাধারণত আইন দ্বারা নিষিদ্ধ নয় বা বেআইনি কাজ নয়। | আইন দ্বারা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ও বেআইনি কাজ। |
শাস্তির প্রকৃতি | এর জন্য আইনগত শাস্তি (যেমন: জেল, জরিমানা) পেতে হয় না। শাস্তি সাধারণত সামাজিক হয় (যেমন: নিন্দা, তিরস্কার, সমাজচ্যুতি বা সামাজিকভাবে এড়িয়ে চলা)। | এর জন্য আইনগত শাস্তি (যেমন: জেল, জরিমানা, মৃত্যুদণ্ড) ভোগ করতে হয়। শাস্তি নির্ধারণ করে আইন ও বিচার ব্যবস্থা। |
ক্ষেত্র বা পরিধি | এর ক্ষেত্র ব্যাপক ও বৃহত্তর। সমাজের প্রায় সমস্ত অপ্রত্যাশিত আচরণই এর অন্তর্ভুক্ত। | এর ক্ষেত্র সীমিত ও সংজ্ঞায়িত। শুধু আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় কাজগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। |
সময় ও স্থানের প্রভাব | এটি আপেক্ষিক। সংস্কৃতি, সময়, স্থান ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ভেদে বিচ্যুতির ধারণা পরিবর্তিত হতে পারে। (যেমন: বহু আগে বিধবা বিবাহ বিচ্যুতি ছিল, এখন নয়)। | এটিও আপেক্ষিক হলেও বিচ্যুতির তুলনায় কম আপেক্ষিক। অপরাধের সংজ্ঞা সাধারণত দেশের আইনে সুনির্দিষ্টভাবে লেখা থাকে। |
উদাহরণ | বড়দের সম্মান না করা, ট্রাফিক নিয়মের ছোটখাটো লঙ্ঘন (যেমন: জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হওয়া), প্রকাশ্য স্থানে জোরে কথা বলা, মাতাল হওয়া (যদি তা আইন লঙ্ঘন না করে)। | চুরি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, জালিয়াতি, অপহরণ, মাদকদ্রব্য পাচার। |
সারসংক্ষেপ:
অপরাধ হলো বিচ্যুতির একটি বিশেষ রূপ। যখন কোনো বিচ্যুতিমূলক আচরণ সমাজের আইন দ্বারা দণ্ডনীয় বলে বিবেচিত হয়, তখনই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। অন্যদিকে, যখন কোনো আচরণ শুধু সামাজিক রীতিনীতি বা মূল্যবোধের পরিপন্থী হয়, কিন্তু আইন ভঙ্গ করে না, তখন তা কেবল বিচ্যুতি হিসেবেই পরিচিত।
অপরাধ ও বিচ্যতি是社会学的两个 গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এদের মধ্যে পার্থক্য নিচে সারণির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো:
অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | অপরাধ (Crime) | বিচ্যুতি (Deviance) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত আইন লঙ্ঘন করাকে অপরাধ বলে। | সমাজ কর্তৃক গৃহীত প্রচলিত নিয়ম-মূল্যবোধ ও সামাজিক প্রথা লঙ্ঘন করাকে বিচ্যুতি বলে। |
আইনগত ভিত্তি | আইনের অস্তিত্ব অপরাধের জন্য আবশ্যক। এটি রাষ্ট্র কর্তৃক সংজ্ঞায়িত। | আইনের প্রয়োজন নেই। সামাজিক নিয়ম ও মূল্যবোধই এর ভিত্তি। |
প্রকৃতি | এটি বিচ্যুতির একটি বিশেষ রূপ। সকল অপরাধই বিচ্যুতি। | এটি একটি ব্যাপক ধারণা। সকল বিচ্যুতি অপরাধ নয়। |
দণ্ড | অপরাধের জন্য আইনগত বা আনুষ্ঠানিক দণ্ড (জরিমানা, কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড) প্রদান করা হয়। | বিচ্যুতির জন্য সাধারণত অনানুষ্ঠানিক ও সামাজিক দণ্ড (সমাজচ্যুতি, তিরস্কার, অপবাদ) প্রদান করা হয়। |
নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা | রাষ্ট্রীয় সংস্থা যেমন- পুলিশ, আদালত, কারাগার ইত্যাদি। | সামাজিক সংস্থা যেমন- পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। |
স্থায়িত্ব | অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তি আইন পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। | বিচ্যুতির সংজ্ঞা সময়, স্থান ও সংস্কৃতি ভেদে পরিবর্তিত হয়। |
উদাহরণ | খুন, ডাকাতি, চুরি, রাহাজানি ইত্যাদি। | প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, অদ্ভুত পোশাক পরা, কোনো সামাজিক রীতি না মানা (যেমন: বিয়ে না করা) ইত্যাদি। |
মূল কথায়:
- অপরাধ হলো আইন ভঙ্গ।
- বিচ্যুতি হলো সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ।
সহজভাবে বলতে গেলে, প্রতিটি অপরাধই একটি বিচ্যুতি, কিন্তু প্রতিটি বিচ্যুতি অপরাধ নয়। যেমন: সমাজে অদ্ভুত পোশাক পরা একটি বিচ্যুতি (Deviance), কিন্তু এটি অপরাধ নয়। অন্যদিকে, কারো টাকা জোর করে নেওয়া既是 একটি বিচ্যুতি আবার এটি একটি অপরাধ (Crime)।