অথবা, কার্যকারণ তত্ত্বকে আল কিন্দি কিভাবে অধিবিদ্যায় ব্যবহার করেন?
অথবা, জগতের ব্যাখ্যায় আল কিন্দি কিভাবে কার্যকারণ তত্ত্বের সাহায্য নিয়েছেন?
অথবা, অধিবিদ্যায় আল কিন্দি কিভাবে কার্যকারণ তত্ত্ব প্রয়োগ করেন?
অথবা, আল কিন্দি কিভাবে অধিবিদ্যা ও কার্যকারণ তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে মুতাজিলা সম্প্রদায়ের যুক্তিবাদী দর্শনের ভাবধারায় পরবর্তীতে যে কয়েকজন দার্শনিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আল কিন্দি তাদের মধ্যে অন্যতম। ইসলাম ধর্মের আওতায় থেকে গ্রিক দর্শনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজস্ব দর্শন রচনা করেন। তিনি আরবদের মধ্যে প্রথম দর্শন ও বিজ্ঞানচর্চা করে প্রথম আরব দার্শনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। জগৎ সৃষ্টির ব্যাখ্যায় তিনি কার্যকারণ তত্ত্বের সাহায্য নেন। জগতের ব্যাখ্যায় কার্যকারণ তত্ত্বের ব্যবহার : আল কিন্দির অধিবিদ্যা মূলত জগৎ ও জাগতিক সত্তার সৃষ্টি সম্পর্কিত আলোচনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আল কিন্দি জগতের সব বিষয় ও বস্তু এবং ঘটনাবলিকে কার্যকারণ সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, জাগতিক ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে একটি কার্য ও কারণের সম্পর্ক। কার্যকারণ মূলত এমন একটি বৈজ্ঞানিক মতবাদ যেমন মনে করা হয় প্রতিটি ঘটনার পিছনে কারণ থাকবেই। কারণ ব্যতীত কোন কিছু ঘটা বা উৎপাদন হওয়া সম্ভব নয়। যেখানে কার্য আছে সেখানে আবশ্যিকভাবে কারণ থাকবেই। আর কারণ এক বা একাধিক হতে পারে। আল কিন্দি এ সুশৃঙ্খল জগতের পিছনেও কারণের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। তাঁর মতে জগতের পিছনে একটি আদি ও সর্বোচ্চ কারণ রয়েছে। এটি অনাদি ও অনন্ত। আল কিন্দির মতে আল্লাহই এ আদি কারণ অর্থাৎ আল্লাহ সব কারণের কারণ এবং তার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, আল্লাহ জগতকে পরিচালিত করেন, তবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন না। কতকগুলো সূত্র বা নিয়মের মাধ্যমে তিনি জগৎ পরিচালনা করেন। তবে কার্য ও কারণের একটি ক্রম আছে। অর্থাৎ উচ্চতর শক্তি বা গুণ নিম্নতর শক্তি বা গুণকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে নিম্নতর শক্তি বা গুণ উচ্চতর শক্তি বা গুণকে
প্রভাবিত করতে পারে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, আল কিন্দি জগতের সৃষ্টি সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় কার্যকারণ তত্ত্বের প্রয়োগ করেছেন এবং ধর্মতত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বা অনন্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর মতে জগৎ ও আল্লাহর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কে রয়েছে এবং একটি পর্যায়ে সবই আল্লাহর সত্তায় বিলীন হয়ে যাবে। আল্লাহই সকল কারণের আদি কারণ।


