অথবা, বাংলাদেশ কী একটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশ-ম্যালথাসের তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ম্যালথাসের অতিরিক্ত জনসংখ্যা তত্ত্বটি লিখ।
অথবা, জনসংখ্যা সম্পর্কিত ম্যালথাসের তত্ত্বটি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদান হলো জনসংখ্যা। জনসংখ্যা ছাড়া যেমন কোনো রাষ্ট্র কল্পনা কর্মঠ জনশক্তি
করা যায় না, তেমনি এটা ছাড়া কোনো জাতির অর্থনৈতিক উন্নতির মুক্তি সম্ভব নয়। একটি সুস্থ, দক্ষ, প্রত্যেকটি দেশের জন্যই মূল্যবান সম্পদ। তবে জনাধিক্য সমস্যা জাতির মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল বয়ে আনে। এ
অপরিহার্য উপাদানটি অন্যান্য আরও অনেক সমস্যার জন্ম দেয়। তাই জনসংখ্যার প্রয়োজনীয়তা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি জনসংখ্যা শান্তি বিঘ্নের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কিত ম্যালথাসের তত্ত্ব : কোনো দেশের জনসংখ্যা অতিরিক্ত কি না তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। কেউ কেউ মনে করেন দেশের ঘনত্ব অধিক হলে তাকে অধিক জনসংখ্যার
দেশ বলে আবার কেউ বলেন সম্পদ অপেক্ষা জনসংখ্যা বেশি হলে, দেশটি হবে জনবহুল দেশ। অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসের মতে, “কোনো দেশের জনসংখ্যা যদি এত অধিক হয় যে, উক্ত দেশে উৎপাদিত খাদ্য দেশের জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে সমর্থ নয়, তাহলে তাকে অধিক জনসংখ্যার দেশ বলা হবে। এরূপ অবস্থায় দেশে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, খাদ্যাভাব প্রভৃতি দেখা দেবে এবং প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এগুলোর মাধ্যমে জনসংখ্যার ক্ষমতা বিধান করবে।” ম্যালথাসের এ তত্ত্বটি আজকাল তেমন গৃহীত হয় না। কারণ, তিনি জনাধিক্য সমস্যাটিকে কেবল খাদ্যশস্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করেছেন। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বানুসারে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণের মতে, জনসংখ্যা সমস্যাকে কেবল খাদ্যশস্যের প্রেক্ষিতে বিচার না করে বরং, সম্পদ ও উৎপাদন ক্ষমতার সাথে বিবেচনা করাই কাম্য। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বানুসারে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জনসংখ্যা থাকা প্রয়োজন । অর্থাৎ, যে নির্দিষ্ট পরিমাণ জনসংখ্যা থাকলে জাতীয় মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ হয়, সেটাই কাম্য জনসংখ্যা। যখন কোনো দেশের জনসংখ্যা এ কাম্য জনসংখ্যা অপেক্ষা বেশি হবে, তখন তাকে অধিক জনসংখ্যার দেশ বলা হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি দেশের জনসংখ্যা যদি সে দেশের সম্পদ অপেক্ষা, আয়তন অপেক্ষা অধিক হয়, তবে তাকে অধিক জনসংখ্যার দেশ বলা হবে। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সম্পদ না বলে দায় বলাই শ্রেয় ।