অথবা, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ কী? অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের সাহায্যে কেমন করে
তথ্যসংগ্রহ করা যায়? বিশ্লেষণ করে দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি হিসেবে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যবেক্ষণের সাহায্যে অতিসহজেই সত্য তথ্য উদ্ঘাটন করা সহজ হয়। আর পর্যবেক্ষণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ যেটা গবেষকের সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। সামাজিক গবেষণায় ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে থাকে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ । এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট উপাত্তের ‘জীবন প্রণালিও সংগ্রহ করা হয়ে থাকে । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ : অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ বলতে বুঝায় গবেষক সরাসরি অংশগ্রহণ করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটন করার প্রক্রিয়াকে। এখানে ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করে তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন ।
নিয়ে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
মেজার ও ক্যান্টন বলেছেন, “The observer’s task is to place himself in the best position forgetting a complete and unbiased picture of the life of the community.” এখানে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে একজন পর্যবেক্ষক একটি সম্প্রদায়ের সঠিক তথ্য পাবার সবচেয়ে উত্তম কি ভূমিকা পালন করবেন? এর সঠিক উত্তর দেওয়া মুশকিল কারণ এটা নির্ভর করবে সম্প্রদায়ের প্রকৃতি, আকার ও মানসিকতার উপর। পর্যবেক্ষক শুধুমাত্র এখানে তার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে থাকে। অনেক সময় পর্যবেক্ষক স্বীয় সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বসবাস করে তাদের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে থাকেন । সুতরাং বলা যায় যে, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ হচ্ছে একজন গবেষক সমাজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে তাদের আচার আচরণ, শিক্ষা সংস্কৃতি, অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি নিজে উপস্থিত থেকে পর্যবেক্ষণ করে জরিপ কার্য সমাধান করে থাকে ।
এ ধারণাকে পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়ের ধারণা থাকা প্রয়োজন :
১. কি কি জিনিস দেখা উচিত (What should be observed?)
২. পর্যবেক্ষকের পর বিষয়গুলো যথার্থরূপে নথিভুক্ত করা (Recording of observation) তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষিত বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো (Relationship between observes and observed). এ বিষয়গুলো সামনে রেখে একজন পর্যবেক্ষককে তার পর্যবেক্ষণের কাজ সমাধান করতে হয় ।
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের দ্বারা কিভাবে তথ্যসংগ্রহ করা হয় : এ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষক
তথ্যসংগ্রহ করার সময় পূর্বপরিকল্পিত কোনো অনুমান বা নির্দিষ্ট ছক থাকে না এবং পূর্বপ্রস্তুতকৃত কোনো প্রশ্নের অবতারণা থাকে না । এখানে দু’টি জিনিস অনুসরণ করা হয় :
ক. যা ঘটে বা ঘটছে তা প্রত্যক্ষ করা ও পর্যবেক্ষিত জিনিসকে নথিবদ্ধ করা।
খ. এ কাজগুলো করার জন্য নিম্নোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত :
১. বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন : গবেষককে সঠিক পর্যায়ে তথ্যসংগ্রহের জন্য যেটা বেশি প্রয়োজন তা হলো বেশি বেশি পরিচিত হওয়া। তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সঠিক পর্যায়ে যদি পরিচিতি ব্যাপ্তি করা যায় তবে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করা সহজ হবে এবং মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের খবরাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে। এখানে কৌশল অবলম্বন করে এমনভাবে তাদের সাথে মিশতে হবে যেন তারা তাদের নিজেদের একজন মনে করে।
২. উপাত্ত সংগ্রহ: এখানে পর্যবেক্ষক স্থানীয় লোকদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে কৌশলে তাদের তথ্যসংগ্রহ করে থাকেন । এজন্য গবেষককে বিভিন্ন ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। যেমন- স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে তার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, মিটিং এ অংশগ্রহণ, মতবিনিময়, অনুমান প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে স্থানীয় লোকদের প্রকৃত অবস্থা উপলদ্ধি করতে পারেন ।
৩. উপাত্ত লিপিবদ্ধকরণ : অংশগ্রহণকারী গবেষক সংগৃহীত তথ্য সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করতে হয় । এক্ষেত্রে কোনো কোনো গবেষক মাঠ পর্যায়ে সংক্ষেপে তথ্য লিপিবদ্ধ করেন আবার কোনো কোনো গবেষক পরবর্তিতে লিপিবদ্ধ করেন। তবে গবেষকের অবশ্যই যান্ত্রিক সুবিধাদি থাকা বাঞ্ছনীয়। যেমন- টেপ-রেকর্ডার, ভিডিও, ক্যাসেট, ভিসিআর ইত্যাদি। তবে অংশগ্রহণের সময় এ যান্ত্রিক জিনিসপত্র সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় কারণ এর মাধ্যমে ব্যক্তিদের স্বাভাবিক আচরণ ব্যাহত হতে পারে। তবে একজন পর্যবেক্ষক তথ্যসংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের পদ্ধতির আশ্রয় নেবে তা নির্ভর করে গবেষণায় কোন ধরনের তথ্যের প্রয়োজন, গবেষণা পরিবেশের অবস্থা কিরূপ ইত্যাদির উপর ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী পদ্ধতি । এর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা অপরিসীম ।