👉 মুদ্রানীতি কী ? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর ।

[ad_1]

মুদ্রানীতি কী ? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : একটি উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রানীতির ভূমিকা কিরূপ , তা নির্ভর করে সেদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যের উপর । মুদ্রানীতি কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচকও বলা যায় । যার মাধ্যমে একটা দেশ উন্নতির দিকে যাত্রা করবে ।

মুদ্রানীতি : যে নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে তাকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে । দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষ বলতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বিত ব্যবস্থাকে বুঝানো হয় । আর্থিক নীতির উল্লিখিত সংজ্ঞাটিকে কখনো সংকীর্ণ সংজ্ঞা বলা হয় । অধ্যাপক পল এইনডিগে প্রসারিত সংজ্ঞা প্রদান করেন । তাঁর মতে , “ আর্থিক ও অনার্থিক লক্ষ্যে পরিচালিত সবরকমের আর্থিক ও অনার্থিক সিদ্ধান্ত এবং গৃহীত পদক্ষেপ যাদের দ্বারা দেশের অর্থব্যবস্থা প্রভাবিত হয় , তাদের সমন্বিত রূপায়ণকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য : একটি উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রানীতির ভূমিকা কিরূপ , তা নির্ভর করে সেদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যের উপর । বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ । অভ্যন্তরীণ দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা এবং উপযুক্ত বৈদেশিক বিনিময় হার নীতির অভাব বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা । অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন । সে লক্ষ্যে আর্থিক নীতির ভূমিকাও যথেষ্ট । বাংলাদেশে মুদ্রানীতির কতিপয় উদ্দেশ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

১. বৈদেশিক বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা : বাণিজ্যের উপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে । বাণিজ্য ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রয়োজনে বিনিময় হার স্থির রাখতে হয় । তারই ভিত্তিতে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সুষ্ঠু প্রসার ঘটতে পারে । তাই বাংলাদেশে মুদ্রানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বৈদেশিক বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ।

২. স্থিতিশীল মূল্যস্তর ও সঞ্চয় বৃদ্ধি : মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা একটি দেশের জন্য অত্যাবশ্যক । মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতার দ্বারা অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করা যায় । বাংলাদেশে জনগণের মাথাপিছু আয় কম । মাথাপিছু সঞ্চয়ও কম । অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অধিক সঞ্চয় ও বিনিয়োগ । সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে । সে লক্ষ্যেই মুদ্রানীতি পরিচালিত হওয়া উচিত ।

৩. নিয়োগ বৃদ্ধি : বাংলাদেশের আর্থিক নীতির লক্ষ্য দেশের উৎপাদন ও নিয়োগ বৃদ্ধি । মুদ্রানীতি এমনভাবে পরিচালিত হতে হবে , যাতে নিয়োগের নিম্নাবস্থা থেকে নিয়োগ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ণ নিয়োগের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় । আবার মুদ্রানীতি এমনভাবে পরিচালিত হতে হবে , যাতে নিয়োগ বাড়াতে গিয়ে দেশ আবার অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির কবলে না পড়ে ।

৪. অর্থের যোগান ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা : অর্থের যোগান ও চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে আর্থিক নীতি গৃহীত হওয়া উচিত । এ নীতি অনুসারে অর্থের পরিমাণ এমনভাবে বৃদ্ধি করতে হবে , যার দ্বারা সমাজের উৎপাদন , আয় , নিয়োগ ও মূল্যস্তরের উপর কোন বিরূপ প্রভাব না পড়ে । অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি কিংবা মুদ্রা সংকোচন কোনটাই কাম্য নয় । তাই অর্থের যোগান যাতে নিরাপদ সীমা অতিক্রম না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ।

৫. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মুদ্রানীতির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য । দেশের মোট দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার যোগানের সাথে মোট অর্থের চাহিদার ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব দেশের অর্থ কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত । যখন অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা দেখা যায় এবং দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে , তখন অর্থ কর্তৃপক্ষকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় । অর্থের চাহিদা যখন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার যোগানের চেয়ে কম হয় এবং দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তখন ঋণের প্রসার হয় । নমনীয় মুদ্রানীতির মাধ্যমেই তা সম্ভবপর । নমনীয় মুদ্রানীতির দ্বারা দেশের বিনিয়োগ , আয় ও নিয়োগ বাড়ানো যায় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে , আর্থিক ও অনার্থিক লক্ষ্যে পরিচালিত সবরকমের আর্থিক ও অনার্থিক সিদ্ধান্ত এবং গৃহীত পদক্ষেপ যাদের দ্বারা দেশের অর্থব্যবস্থা প্রভাবিত হয় , তাদের সমন্বিত রূপায়ণকে আর্থিক নীতি বা মুদ্রানীতি বলে । দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ মুদ্রানীতির কোন বিকল্প নেই ।

👉 বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুদ্রানীতির ভূমিকা উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় , যার মাধ্যমে একটি দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়ে , জীবনযাত্রার মান বাড়ে এবং অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জিত হয় । পরিকল্পনার ভিত্তিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগের দ্বারা নিয়োগ ও প্রকৃত উৎপাদন বাড়ে । পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুদ্রানীতি কোন ভূমিকা পালন করে কি না , তাই বর্তমানে আলোচ্যবিষয় ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুদ্রানীতির ভূমিকা : নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রেক্ষাপটে মুদ্রানীতির ভূমিকা আলোচনা করা যাক :

১. সঞ্চয়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ : উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের আর্থিক সম্পদ সৃষ্টি ও তার বিনিয়োগের সুযোগ থাকা প্রয়োজন । তার জন্য চাই পর্যাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান । উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে তাকে মূলধন হিসেবে যোগান দেয়া অত্যাবশ্যক । উপযুক্ত মুদ্রানীতি অবলম্বনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ বাজারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে । অর্থ বাজারের অন্তর্গত প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় ।

২. আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মুদ্রানীতির ভূমিকা : অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক নির্দেশনা হলো জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি । সেক্ষেত্রে মুদ্রানীতি ভূমিকা পালন করে । সামগ্রিক চাহিদা বাড়লে এবং তার সঙ্গে সংগতি রেখে অর্থের যোগান বাড়ানো হলে জাতীয় আয় বাড়ে , তা উন্নয়নের সহায়ক হয় ।

৩. মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা : অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে মসৃণ পথে এগিয়ে নেয়া তখনই সম্ভব , যখন মূল্যস্তর মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে । এখানে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বলতে সে অবস্থা বুঝানো হয় , যেখানে অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি থাকবে না , সেখানে মুদ্রা সংকোচনও থাকবে না । অর্থাৎ মূল্যস্তরের উঠানামা অর্থনীতিকে যেন বিপর্যস্ত না করে , সেদিকে অর্থ কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য রাখতে হবে ।

৪. বৈদেশিক বিনিময়ের স্থিতিশীলতা : বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা দ্বারা উন্নয়ন প্রক্রিয়া সফল হয় । আর্থিক নীতির অনুষঙ্গ হিসেবে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার নীতি পরিচালিত হয় । অর্থ কর্তৃপক্ষ দেশীয় মুদ্রামানকে ভিত্তি হিসেবে ধরে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে । এমতাবস্থায় বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মূলধন অর্থনীতির সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে ।

৫. কাম্য ঋণ নীতি অবলম্বন : মুদ্রানীতির অন্যতম অংশ হলো ঋণ নীতি । উন্নয়নের লক্ষ্যে অনুৎপাদনশীল খাত থেকে উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ স্থানান্তর করতে হয় । এমতাবস্থায় ব্যাংক কর্তৃক ঋণ সরবরাহ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে ।

৬. প্রকৃত GNP এর সাথে অর্থের যোগানের সংগতিবিধান : উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয়া অর্থ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব । তবে প্রকৃত GNP বৃদ্ধির সাথে অর্থ যোগানের হার সংগতিপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয় । অর্থ সৃষ্টির একটি নিরাপদ সীমা কর্তৃপক্ষকে মেনে চলতে হয় , যাতে দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি জনগণের সহনীয়তার মধ্যে থাকে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে , আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মুদ্রানীতি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে । তাই উন্নয়নে মুদ্রানীতির ভূমিকা যথেষ্ট । তাছাড়া উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে অর্থের যোগানের সংগতিবিধান করে সঞ্চয়কে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় এনে , মূল্যস্তর স্থিতিশীল রেখে , কাম্য ঋণ নীতি অবলম্বন করে এবং বিনিময় স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন ক্ষেত্রে মুদ্রানীতি অবদান রাখে ।

[ad_2]