স্বাধীনতা যুদ্ধে বি এল এফ (মুজিব বাহিনী)-এর অবদান আলোচনা কর ।

অথবা, মুক্তিযুদ্ধে বি এল এফ (মুজিব বাহিনী)-এর ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বি এল এফ (মুজিব বাহিনী) এর কি অবদান ছিল? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা। এ মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রত্যাশিত লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। তাই নিজের অধিকারকে ছিনিয়ে আনার জন্য, দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন করার জন্য ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সামাজিক জীবনে এক দীপালি সংযোজন । এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদশে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান দখল করে নেয়।
বি এল এফ (মুজিব বাহিনী) : ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে বি এল এফ (বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট) নামে একটি রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠে। বি এল এফ পরে মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মুজিব বাহিনীর সদস্যদের মূলত গেরিলা যুদ্ধের উপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা দেশের অভ্যন্তরে পাক হানাদারদের যাতায়াত ও রসদ সরবরাহ বন্ধ করাসহ ঘাঁটিগুলোর উপর গেরিলা কায়দায় আক্রমণ চালিয়ে তাদের বিপর্যস্ত করে তোলে। গেরিলারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে। গেরিলারা পাকিস্তানিদের যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। সেতু-কালভার্ট ধ্বংস করে দেয় যাতে করে পাকিস্তানিরা এদেশের উপর হামলা করতে না পারে। নভেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধের গতি তীব্রতর হয়। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট, দিনাজপুর, রংপুর, যশোর, কুষ্টিয়া প্রভৃতি সীমান্ত বর্তী জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয় এবং আস্তে আস্তে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, খুলনা ও রাজশাহীর মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুজিব বাহিনী স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামকে আরো তীব্রতর করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিন। হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণে বাংলা হলো স্বাধীন, লক্ষ শহীদের রক্তে সিক্ত স্বাধীনতার তীর্থস্থান।