স্তরবিহীন সমাজ অলীক কল্পনা যা মানব সমাজের ইতিহাসে কোন সময়ই ছিল না” (সরোকিন) উদাহরণসহ আলোচনা করো।

অথবা, সরোকিনের বর্ণনানুসারে সংস্কৃতি সম্পর্কে সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান কর।
অথবা, “স্তরবিহীন সমাজ অলীক কল্পনা যা মানবসমাজের ইতিহাসে কোন
সময়ই ছিল না।”-(সরোকিন) উক্তিটির সারবস্তু নিরূপণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
‘Social stratification’ বা সামাজিক স্তরবিন্যাস প্রত্যয়টি একটি সমাজতান্ত্রিক প্রত্যয়। ভূতত্ত্বে ‘Strata’ প্রত্যয়টি মাটি বা শিলার বিভিন্ন স্তর (Strata) বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। ভূতত্ত্বের এ প্রত্যয়টি সমাজের উঁচুনিচু বিভিন্ন শ্রেণি বা মর্যাদার মানুষকে বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানে গৃহীত হয়েছে। স্তর প্রত্যয়টিকে সিঁড়ি বা মইয়ের ধাপের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। স্তরবিন্যাস বলতে বুঝায় যেভাবে স্তরগুলো সজ্জিত বা বিন্যস্ত। অতএব সামাজিক স্তরবিন্যাস অর্থ সমাজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচুনিচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থা।
সামাজিক স্তরবিন্যাস : সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে বুঝায় সমাজের মানুষকে উঁচুনিচু, সমান বিভিন্ন সামাজিক পদমর্যাদায় ভাগ করে দেয়া। সমাজের মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণি, জাতি বা বর্ণে ভাগ করা হয়। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং শ্রেণির অসম অবস্থান বা অসম মর্যাদার বিন্যাসকে বুঝায়। সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সমাজতাত্ত্বিক প্রত্যয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে মর্যাদা, শ্রেণি ও অন্যান্য কতক বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণাটি ভূতত্ত্ব থেকে নেয়া হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকরা যেমন ভূ-ত্বকের বিভিন্ন স্তর লক্ষ্য করেছেন তেমনি সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজে মর্যাদা ও ক্ষমতার কাঠামো আবিষ্কার করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী সরোকিন সমাজ তিন ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করেছেন। যথা : অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মর্যাদা। এ তিন শ্রেণির মাঝে আরো অনেক অভ্যন্তরীণ যোগসূত্র দেখিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে অর্থনৈতিক দিকটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন যে, আর্থিক ক্ষমতা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে রাজনৈতিক ও শ্রেণি মর্যাদা তার সাথে জড়িত থাকে এবং যেমন দুটির মর্যাদা লাভ করা যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরোকিন সামাজিক স্তরবিন্যাসকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্নভাবে লক্ষ্য করেছেন। তার মতে, সকল সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসরূপ একরকম নয়। যেমন- শিল্পোন্নত সমাজে সামাজিক বিন্যাসকে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও শ্রেণি মর্যাদার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং শিল্পে অনুন্নত সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষমতার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন যে, অনুন্নত ও উন্নয়নকামী দেশগুলোতে সামাজিক ক্ষমতা বিত্তশালী লোকদের হাতে রয়েছে। শ্রমিক শ্রেণি সেখানে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু শিল্পোন্নত দেশে পুঁজিপতি ও মালিকগণ শ্রমিকদের অবজ্ঞা করতে পারে না। কারণ উৎপাদন ক্ষমতা সেখানে শ্রমিকদের হাতে রয়েছে। সুতরাং তিনি দেখিয়েছেন যে উচ্চ শ্রেণিভুক্ত লোকের বা পুঁজিপতিগণই রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে সমাজে অধিকার বিস্তার করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, সরোফিনের সামাজিক স্তরবিন্যাসে সামাজিক ক্ষমতা বিত্তশালী লোকদের হাতে রয়েছে। শ্রমিক শ্রেণি সেখানে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এককথায় পুঁজিপতিগণই রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে সমাজে অধিকার বিস্তার করতে পারে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4/