সে আইন বিশ্ব মানবের সত্য উপলব্ধি হতে সৃষ্ট, সে আইন সার্বজনীন সত্যের, সে আইন সার্বভৌমিক ভগবানের।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত
প্রসঙ্গ : বিশ্বমানবের সত্য উপলব্ধি থেকে সৃষ্ট সৎ ব্যক্তির হৃদয় উৎসারিত বাণীর কথাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ন্যায়-সত্য-সুন্দর চিরায়ত। তারপরও এগুলো ব্যাপকড়াবে প্রতি মুহূর্তেই চর্চার বিষয়। দীর্ঘদিন সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায় এবং দিনকে রাত বলতে থাকলে সত্য উদাসীন হয়ে পড়ে। সে অবস্থায় মিথ্যা এবং অন্যায়ই সর্বত্র জায়গা করে নেয়। শুরু হয় অরাজকতা, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা। লোভ, লালসা, স্বার্থপরতাই তখন বড় হয়ে দেখা দেয়। এ ধরনের বিপরীত অবস্থা কোন মুক্তমনা সচেতন মানুষের কাম্য নয়। অন্যায় শাসন ক্লিষ্ট বন্দী সত্যের পীড়িত ক্রন্দন তখন কবির মত দেশপ্রেমিক, মানবপ্রেমিকের কণ্ঠে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মত প্রকাশ পায়। ন্যায়ধর্ম, সত্যধর্ম তখন পিঞ্জর থেকে বেরিয়ে এসে বেআইনি অসত্যের স্থান কেড়ে নেয়। কেননা, অসত্য ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সাময়িক, কখনো স্থায়ী নয়। স্থায়ী এবং চিরকালীন হলো সর্বজনীন সত্যের আইন, সার্বভৌমিক স্রষ্টার আইন। বিশ্ব মানবের সচেতন উপলব্ধি হতে সৃষ্ট আইনই শাশ্বত- যে আইন কখনো কারও অধিকার কেড়ে নেয় না, অত্যাচার নিপীড়ন করে না, কাউকে শোষণ বঞ্চনার শিকারে পরিণত করে না, অন্যায়ভাবে কাউকে কারাগারে নিক্ষেপ করে না। সে আইন ধনী দরিদ্র সবার জন্য এক ও অভিন্ন। কেননা, স্রষ্টার দৃষ্টিতে সবাই সমান, ন্যায় ও সত্যের দৃষ্টিতে সবার অধিকার ও মর্যাদা সমান। কবির উপর প্রযোজ্য আইন ন্যায়ধর্মী নয়, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তা রাজার মিথ্যা ক্ষমতা ও জাত্যাভিমানের উপর প্রতিষ্ঠিত। কাজেই তা সবার কাছে, সর্বকালে গ্রহণযোগ্য নয়।
মন্তব্য : কবি ছিলেন ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের পূজারী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী। কাজেই তাঁর কণ্ঠে যা ধ্বনিত হয়েছে তা বিশ্বমানবের সত্য উপলব্ধি থেকে সৃষ্ট।