Download Our App


ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079

ডিগ্রী অনার্স বই App এ পেতে Whatsapp এ nock করে User ID নিয়ে Login করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

প্রশ্নের উত্তর

সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর ।

অথবা, সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর ।
অথবা, সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, অন্যান্য মরমীবাদের সাথে সুফিবাদের কোন কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা আলোচনা কর।
অথবা, সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমীবাদের মধ্যে কী কী পার্থক্য আছে বলে তুমি মনে কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
সুফিবাদ এক প্রকার মরমিবাদ। পরম সত্তাকে জানার ও চেনার আকাঙ্ক্ষা এবং আল্লাহর প্রেম ও আল্লাহর ধ্যানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি মনোভাব সুফিবাদ নামে প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পার্থিব জীবনে দুঃখকষ্ট সহ্য করা এবং যাবতীয় পাপ কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়ে গভীর ধ্যানে নিমজ্জিত হয়ে আল্লাহর প্রেম উপলব্ধি করাই সুফিবাদ । ইন্দ্রিয় ও ইচ্ছার বিশুদ্ধকরণ, অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ জীবন গঠন এবং ঐশী সত্তার উপলব্ধির মাধ্যমে চিরন্তন পরিতৃপ্তি ও শান্তি প্রাপ্তির মধ্যেই সুফিবাদের সারসত্তা নিহিত রয়েছে।
সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে পার্থক্য : ইসলামি মরমিবাদকে সুফিবাদ বলা হয়। সুফিবাদ ইসলামের বহির্ভূত কোন বিষয় নয়, এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান দিক। সুফিবাদ ইসলামের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক ও মিস্টিক উপাদানের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি।
ইসলামের দুটি দিক রয়েছে। একটি বাইরের দিক, অপরটি ভিতরের দিক। যুগে যুগে এমন একদল লোক জন্মগ্রহণ করেছেন যারা অতীন্দ্রিয় অনুভূতিতে বিশ্বাস করেন এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে খোদার সাথে মিলিত হতে চান। কিন্তু সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে নিলিখিত পার্থক্য বিদ্যমান :

প্রথমত, সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য এই যে, সুফিবাদ আত্মার পবিত্রকরণের ব্যাপারে মানুষের দৈহিক আবেদনের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে। এ মতবাদ জীবনের পার্থিব তাৎপর্য নস্যাৎ করে আত্মিক সাধনায় মুক্তির অনুসন্ধান করে না। ইসলামের শিক্ষানুসারে সুফিরা জীবনের পার্থিব ও অপার্থিব, দৈহিক ও আধ্যাত্মিক দিককে বিচ্ছিন্ন করেন না। অপরপক্ষে, অন্যান্য মরমিবাদ মানুষের আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে দৈহিক আবেদনের গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান মিস্টিকরা আত্মনিগ্রহকে মুক্তির বা মোক্ষ লাভের উপায় বলে মনে করে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, সুফিবাদ জীবনের পূর্ণাঙ্গ দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু অন্যান্য মরমিবাদ জীবনের আংশিক দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত।

দ্বিতীয়ত, সুফিবাদ জীবনের অন্যান্য সাধনার সাথে দেহ ও প্রেমের সাধনাকে পৃথক করে না। জীবনের প্রত্যেক স্তরের সান্নিধ্য ও কর্তব্যের উপর সমান গুরুত্বারোপ করে। সুফিরা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব মানবের প্রতি যথার্থ কর্তব্য সমাধানের মাধ্যমে খোদার সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়। তাই সুফিবাদ ইসলামি জীবন চেতনার প্রত্যেক স্তর পরিক্রমণের উপর জোর দেয়। অন্যদিকে, অন্যান্য মরমিবাদ জীবনের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সীমারেখা টানে এবং বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মরমিবাদী সাধকগণ সাধারণত ধ্যান ও চিন্তায় মশগুল থেকে জাগতিক কার্যাবলি হতে বিচ্ছিন্ন থেকে সন্ন্যাস জীবনযাপন করেন।

তৃতীয়ত, সুফিবাদ আল্লাহ ও মানুষের মাঝে তৃতীয় কোন শক্তি বা শ্রেণি স্বীকার করে না। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, “(হে রাসূল) আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আমি নিশ্চয়ই তাদের অতি সন্নিকটে আছি। কোন আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি।” এভাবে সুফি সাধকগণ কুরআনের শিক্ষানুযায়ী খোদার সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে কোন তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। কিন্তু অন্যান্য মরমিবাদ খোদা ও মানুষের মধ্যে এক তৃতীয় পক্ষ বা মাধ্যম স্বীকার করে। এরা আল্লাহ ও তার ভক্তদের মধ্যে এক পুরোহিত শ্রেণি খাড়া করেন।
চতুর্থত, সুফিবাদ খোদা ও জগতের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। সুফিদের মতে,খোদা ছাড়া পৃথিবীর কোন অস্তিত্ব নেই। তিনি শূন্য হতে পৃথিবীকে সৃষ্টি করে। পৃথিবী ধ্বংস হবে অথচ তিনি থাকবেন। মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বর্তমান। মানুষ যদি আল্লাহর মধ্যে অবলুপ্ত হয়ে যায় তবে চলবে কি করে? সুফিবাদ তাই আত্মবিলুপ্তির চেয়ে আত্মোপলব্ধির উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে।অপরপক্ষে, অন্যান্য মতবাদ খোদা ও জগতের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে না এবং ঐশী সত্তার মধ্যে অবলুপ্ত হওয়াকে আধ্যাত্মিক সাধনার চরম লক্ষ্য বলে মনে করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সুফিবাদ ও অন্যান্য মরমিবাদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও মরমিবাদের সিঁড়ি বেয়েই সুফিবাদে উপনীত হতে হবে। যারা অতীন্দ্রিয় অনুভূতিতে বিশ্বাস করে আত্মবিনাশের মাধ্যমে খোদার সাথে মিলিত হয় তারাই মরমিবাদে বিশ্বাসী। তাই সব সুফিবাদ মরমিবাদ হলেও সব মরমিবাদকে সুফিবাদ বলা চলে না। সুতরাং উভয়ের গুরুত্বকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার করা যায় না।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!