সাপটা ( SAPTA ) ও সাফটা ( SAFTA ) কী ? সাফটা বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি কী সম্ভব ? SAFTA চুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী ?

[ad_1]

✍️ সাপটা ( SAPTA ) ও সাফটা ( SAFTA ) কী ? সাফটা বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি কী সম্ভব ? SAFTA চুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী ?

উত্তর। ভূমিকা : সাপটা ও সাফটা এ দুটি বিষয় সার্কভুক্ত দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

সাপটা ( SAPTA ) : সাপটা হচ্ছে সার্কভুক্ত আটটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একপ্রকার সমঝোতা চুক্তি । এটি ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ ১১ এপ্রিল সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রিগণ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন । এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে সাপটা চুক্তির বিষয়ে মাতানৈক্য দেখা দেয় । ফলে বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে পেশ করা হলে সেখানে সাপটা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।

“ ঢাকা ঘোষণায় ” সাপটাকে কাঠামোগতভাবে গ্রহণ করা হয় । এছাড়া এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের পরবর্তী বৈঠকের উপর দায়িত্ব দেয়া হয় । গত ১৯৯৫ সালের ২০-২১ এপ্রিলের আইজিজি বা Inter Government Group এর সভায় শুল্ক রেয়াত বিনিময় চূড়ান্ত করা হয় এবং ৮ ডিসেম্বর ( ১৯৯৫ ) থেকে সাপটা কার্যকর হয়েছে ।

সাফটা ( SAFTA ) : সাপটা ( SAPTA ) এর সম্প্রসারিত প্রতিফলনই হচ্ছে সাফটা ( SAFTA ) । সাপটা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর সফলতার উপর নির্ভর করে সাফটার বাস্তবায়ন । দশম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সাফটা গঠনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় । উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত নবম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ২০০২ সালের মধ্যে সাপটাকে সাফটায় রূপান্তর অর্থাৎ সার্ক যুক্ত বাণিজ্য এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল । পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সাফটা কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত হয় । এ অঙ্গীকারের অর্থ হলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সার্কের ৮ টি দেশ বিশ্বের অন্যান সমৃদ্ধশালী আঞ্চলিক জোট যেমন- আসিয়ান , ইউরোপীয় কমন মার্কেট , পুঁজি বিনিয়োগ ও কাঁচামাল আদান – প্রদান ইত্যাদি অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন করবে ।

সাফটা চুক্তির বাস্তবায়নে যেসব ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের স্বল্পোন্নত দেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো হলো :

১. বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ হবে ।

২. আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধি ও বৈরি সম্পর্কের অবসান ঘটবে ।

৩. বিশ্ব বাজারে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে ।

৪. বহুমুখী বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে ।

৫. দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে ।

৬. পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হবে ।

৭. টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বৃদ্ধি পাবে ।

৮. ‘ ট্রেড ব্লক ’ গড়ে উঠবে ।

SAFTA চুক্তির মূল বিষয়বস্তু : ২০০৬ সালে কার্যকর হওয়া সাফটা চুক্তির মূল লক্ষ্য সার্কের ৮ টি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা । চুক্তিটিতে মোট দফা রয়েছে ২৫ টি । চুক্তি অনুযায়ী সার্কভুক্ত দেশগুলোর পণ্যের শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে । সাফটা চুক্তিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে । ভারত , পাকিস্তান , শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে উন্নয়নশীল এবং বাংলাদেশ , নেপাল , ভুটান ও মালদ্বীপকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । এ বিভক্তি করা হয়েছে জাতিসংঘ প্রদত্ত উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের সংজ্ঞা অনুসারে । চুক্তি অনুযাযী উন্নয়নশীল দেশগুলো চুক্তি কার্যকর হওয়ার ২ বছরের মধ্যে তাদের আমদানির শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনবে ।

চুক্তি কার্যকর হওয়ার প্রাক্কালে এ দেশগুলোর শুল্ক হার যদি ২০ শতাংশের কম থাকে তাহলে ২ বছরের জন্য প্রতিবছর মার্জিন অব প্রেফারেন্স ভিত্তিতে প্রকৃত শুল্ক হারের ১০ শতাংশ কমাতে হবে । অন্যদিকে , স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে চুক্তি কার্যকর হওয়ার ২ বছরের মধ্যে তাদের শুল্ক হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে । চুক্তি কার্যকর হওয়ার প্রাক্কালে শুল্ক হার ৩০ শতাংশের কম থাকলে ২ বছরের জন্য প্রতিবছর শুল্ক হার ৫ শতাংশে কমাতে হবে ।

২০০৮ সালের চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হবে । দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান চুক্তি অনুযায়ী তাদের শুল্ক হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে । শ্রীলঙ্কার জন্য সময় দেয়া হয়েছে ৬ বছর । অন্যদিকে , বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশকে ২০১৭ সালের মধ্যে অর্থাৎ চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরবর্তী ৮ বছরের মধ্যে শুল্ক হার শূন্য থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে ।

✍️ বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি তথা আমদানি ও রপ্তানিনীতি আলোচনা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে ক্রমশ উদার বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে । ১৯৮০ এর দশকে এক বছর মেয়াদি এবং নব্বই এর দশকের প্রথমার্ধে দু’বছর মেয়াদি আমদানি ও রপ্তানিনীতি প্রণয়ন করা হয় । ১৯৯৭ সাল থেকে ৫ বছর মেয়াদি বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করা হয়েছে । বর্তমানে বাংলাদেশের উপর বিশ্ব মন্দা অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য সরকার নতুন আমদানি ও রপ্তানিনীতি গ্রহণ করেছে । নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো :

ক . বাংলাদেশের আমদানিনীতি : রপ্তানি সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কাঁচামাল আমদানি পদ্ধতি সহজ করার মাধ্যমে দেশীয় রপ্তানিকে সুদৃঢ় ভিত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে সরকার সংগতিপূর্ণভাবে তিন বছর মেয়াদি ( ২০০৯-১২ ) আমদানিনীতি প্রণয়ন করেছে ।

আমদানিনীতিতে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ :

১. বিশ্ব বাণিজ্য ( WTO ) এর আওতায় বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির ক্রমবিকাশের ধারায় যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তার আলোকে আমদানিনীতিকে আরো সহজ করা ।

২. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারকল্পে অবাধ প্রযুক্তি আমদানির সুবিধা প্রদান ।

৩. গুণগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ।

৪. পণ্যের আমদানির উপর ক্রমান্বয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে শিল্পের উপাদান অধিকতর সহজলভ্য করা এবং প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি । আমদানিনীতি অধ্যাদেশ , ২০০৯-২০১২ প্রণয়নের মাধ্যমে আমদানিনীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে ।

নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো :

১. নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী , পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি ঋণপত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়াই আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে ।

২. খুচরা মোড়কে দুগ্ধজাত শিশুখাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২.৫ কেজি পর্যন্ত টিনের পাত্রে আমদানির সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ।

৩. ননীযুক্ত দুগ্ধজাত খাদ্য মোড়কে ২.৫ কেজি পর্যন্ত টিন / ব্যাগ ইনবক্স পাত্রে আমদানির সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ।

৪. বৃহৎ বায়ুবদ্ধ মোড়কে ননীযুক্ত দুগ্ধজাত খাদ্য ও শিশুখাদ্য আমদানির সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ।

৫. সংরক্ষিত খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে Preservative এর মাত্রা উল্লেখের শর্ত সংযোজন করা হয়েছে ।

৬. রপ্তানিকারক / উৎপাদক কর্তৃক বিনামূল্যে নমুনা আমদানির সর্বোচ্চ সীমা ৫ হাজার মার্কিন ডলার হতে ১০ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে ।

৭. শিল্প / বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রুড সয়াবিন ও ঝুড পামওয়েল আমদানির সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে ।

৮. শর্তসাপেক্ষে হাঁস – মুরগি ও পাখির ডিম আমদানি করার বিধান রাখা হয়েছে ।

৯. বিষাক্ত বর্জ্যযুক্ত জ্ঞাপ ভেসেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ।

১০. শর্তসাপেক্ষে ধান বীজ আমদানির সুবিধা করা হয়েছে ।

১১. টিসিবির জন্য শিল্প ও বাণিজ্যিক আমদানির সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে ।

উপসংহার : বাংলাদেশের বর্তমান আমদানি ও রপ্তানি নীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ।

[ad_2]