প্রশ্নের উত্তর

সমাজ গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব লিখ ।

অথবা, সমাজ গবেষণায় পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধর।
অথবা, সমাজ গবেষণায় পরিসংখ্যানের তাৎপর্য উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রাথমিক পর্যায়ে পরিসংখ্যান কেবল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যকলাপ যেমন- মোট জনসংখ্যা, ভূমির পরিমাণ, শিক্ষার হার, আমদানি-রপ্তানির বর্ণনা প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে পরিসংখ্যান প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষকরে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
সমাজ গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব : সমাজতাত্ত্বিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্বের কতিপয় দিক নিম্নে বিবৃত করা হলো :
১. সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান: সামাজিক গবেষণার মূলভিত্তি হচ্ছে সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান। আর সুশৃঙ্খল অনুসন্ধানের বিভিন্ন দিক বা বিষয় সম্পর্কে পরিসংখ্যান সহায়তা করে থাকে। J. P. Guildford এর মতে, “সুপরিকল্পিত অনুসন্ধান পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম বিবেচনায় আনা হয়।”
২. সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন: সামাজিক গবেষণায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যান সবিশেষ সহায়তা করে থাকে।
Herbert Blalock এর মতে, “সামাজিক বিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যানের জ্ঞান ব্যতীত কোন গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে না।” বস্তুত পরিসংখ্যানের জ্ঞান একজন গবেষককে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষ করে তোলে।
৩. প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ সামাজিক গবেষণায় প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে পরিসংখ্যান সবিশেষ সহায়তা করে থাকে। কোন একটি নির্দিষ্ট গবেষণার জন্য কোন ধরনের তথ্য প্রয়োজন, তথ্যের উৎস, তথ্যের প্রকৃতি, তথ্যের পরিমাণ, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি বা কৌশল, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করার জন্য কি কি পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে পরিসংখ্যান কার্যকর সহায়তা প্রদান করে।
৪. তথ্য সংক্ষিপ্তকরণ : সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যান কেবল প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহই করে না বরং বিশাল বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত তথ্যসারিকে বিভিন্ন সারণির মাধ্যমে শ্রেণিবদ্ধ আকারে সংক্ষিপ্ত করে কার্য উপযোগী করে তুলতেও, সহায়তা করে ।
৫. তথ্য উপস্থাপন : সামাজিক গবেষণায় শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণ তথ্যসমূহকে আরো অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন লেখচিত্র যেমন- আয়তলেখ, গণসংখ্যা বহুভুজ, অজিভরেখা, দণ্ডচিত্র, পাইচার্ট প্রভৃতির মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পরিসংখ্যান বিশেষ সহায়তা করে থাকে।
৬. তথ্য বিশ্লেষণ : সামাজিক গবেষণায় তথ্যের বিশ্লেষণের জন্য সামাজিক গবেষককে অনিবার্যভাবে পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করতে হয়। পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত গড়, মধ্যমা, প্রচুরক, পরিমিত ব্যবধান, সংশ্লেষাঙ্ক, নির্ভরাঙ্ক, কাই-বর্গ পরীক্ষা প্রভৃতি পরিসংখ্যানিক সূত্র প্রয়োগ করে তথ্যের বিশ্লেষণ প্রদান করা হয় । এক্ষেত্রে বিকল্প কোন পন্থা নেই ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পরিসংখ্যানের সহায়তা ব্যতীত সফল গবেষণার পরিসমাপ্তি সম্ভব নয় । মোটকথা, সামাজিক গবেষণা সম্পূর্ণরূপে পরিসংখ্যানের উপর নির্ভরশীল ।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!