সমাজের ৫টি বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

অথবা, সমাজের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, সমাজের ৫টি বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, সমাজের কতিপয় বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ মানবজাতির আদি সামাজিক সংগঠন। সমাজেই প্রতিটি মানুষ পরম শান্তি ও নিরাপত্তার সব ধরনের আশ্রয় খুঁজে পেতে পারে। সমাজ প্রত্যয়টির ধারণা খুবই ব্যাপক। সাধারণভাবে বলা যায়, যখন একাধিক ব্যক্তি কতকগুলো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন তাকে সমাজ বলে।
সমাজের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে সমাজের ৫টি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. সমাজ বিশ্বজনীন সংস্থা (Society is a universal organization) : সময়ের বিচারে সমাজ হচ্ছে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও সর্বজনীন মানবীয় সংস্থা। কেননা সমাজের বিস্তৃতি বিশ্ব জুড়ে। সমাজের অস্তিত্ব নেই বা ছিল না, এমন অবস্থা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে বহুবিধ মানবিক সংস্থা বা সংগঠন রয়েছে। অন্য কোন সংস্থা বা সংগঠন সমাজের মতো সর্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। এজন্য অনেক তাত্ত্বিক সমাজকে সর্বাপেক্ষা বিশ্বজনীন সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেন।
২. সমাজ একটি বিমূর্ত ধারণা (Society is an abstract concept) : সমাজের প্রথম এবং অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বিমূর্ততা। সমাজ সম্পর্কে মানুষ সবসময় আলোচনা পর্যালোচনা করে, তর্কবিতর্ক করে কিন্তু বাস্তবে কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাহ্যিক অবয়ব সমাজের নেই। সমাজকে কখনো দেখা যায় না বা স্পর্শ করা যায় না। সমাজ হলো একটি বিমূর্ত ধারণা বিশেষ। অন্য কোন বাহ্যিক অবয়বের অবকাশ নেই।
৩. সমাজ সর্বব্যাপক ধারণা (Society is holistic concept) : সর্বব্যাপকতা সমাজের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর প্রাণিজগতের সব প্রজাতির মধ্যেই সমাজের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। কেবল মানবজাতির মধ্যেই সমাজব্যবস্থা সীমাবদ্ধ নয়। তবে মানব সমাজকে প্রাণিজগতের সমাজের সাথে তুলনা করা যায় না। পারস্পরিক সচেতনতা ও বিবেকবান আচার আচরণ মানবসমাজকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৪. আত্মসচেতনতা (Self-conciousness) : মানুষের সামাজিক সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আত্মসচেতনতা। সমাজ বলতে বুঝায়, যেখানে সমাজের সদস্যরা তাদের স্বীয় প্রয়োজন সম্পর্কে অবগত এবং তা চরিতার্থ করতে সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করতে হয়। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টির স্বার্থে একে অপরের উপস্থিতি সম্পর্কেও অবগত থাকা অত্যাবশ্যক। সচেতনতা সমাজজীবনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান।
৫. সামাজিক গতিশীলতা (Social mobility) : গতিশীলতা সমাজজীবনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য । সমাজ কোথাও থেমে থাকে না। সমাজ কখনো বিলীন হয়ে যায় না। সমাজ অস্থায়ী কোন জনগোষ্ঠীও নয়। স্থায়িত্বের অর্থ এই নয় যে, সমাজের কোন পরিবর্তন হবে না। বস্তুতপক্ষে, ধীর অথচ ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন একটি সংঘবদ্ধ সমাজের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের মানবীয় আচরণ তার নিজ সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ পারস্পরিক নির্ভরশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ গতিশীল সমাজজীবন কামনা করে। আদিকালেও সমাজবদ্ধ জীবনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। বর্তমানে এ প্রয়োজনীয়তা আরও ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।