প্রশ্নের উত্তর

সমাজের বামুনদের যদি জাত মারবার ইচ্ছে না থাকে মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেল।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পুঁইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সমাজপতি কালীময় চৌধুরী সহায়হরিকে উদ্দেশ্য করে এই উপদেশ বাণী বর্ষণ করেছেন।
বিশ্লেষণ : উক্তিটি সমাজপতি কালীময় চৌধুরীর। তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুসমাজে দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন নির্যাতন ব্যাপকভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। দুস্থও দুর্বল ব্যক্তিদের সামান্য সামাজিক অপরাধকে সমাজপতিরা সবসময় বড় করে দেখতেন। তাদের সাধারণ ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য গুরুদণ্ডের বিধান করা হতো। ধন ও প্রতাপশালী সমাজপতি কালীময় চৌধুরী গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় ব্রাহ্মণ সহায়হরি চাটুয্যেকে তাঁর চণ্ডীমণ্ডপে ডেকে নিয়ে আচ্ছামতো শাসিয়েছেন। সহায়হরির অপরাধ তিনি তাঁর বিবাহযোগ্য অরক্ষণীয়া মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা না করে বামুনদের জাত মারার চেষ্টা করছেন। যদি তিনি ভেবে থাকেন, সমাজে বসে এসকল কাজ করে পার পেয়ে যাবেন, তাহলে এটা তাঁর ভুল ধারণা। সমাজ তাঁকে কোনক্রমেই ক্ষমা করবে না। সহায়হরির মেয়ে ক্ষেন্তির একবার আশীর্বাদ হয়ে বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল। কালীময়ের মতে ক্ষেন্তি তো একরকম উচ্ছৃণ্ড্য করা মেয়ে। আশীর্বাদ হওয়া যা, বিয়ে হওয়া তা। সাতপাকের যা বাকি এই তো। এই উচ্ছুণ্ড্য করা দরিদ্র ব্রাহ্মণের জন্য তো কোন রাজপুত্র পাওয়া যাবে না। সুতরাং যেন- তেনভাবে তাকে পাত্রস্থ করাই কর্তব্য। এর অন্যথা হলে সমাজ মুখ বুজে বসে থাকবে না। তাঁরা এর যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। সুতরাং সহায়হরির উচিত অতিসত্ত্বর মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করা। এ সকল কথার মাধ্যমে কালীময় চৌধুরী অসহায় ব্রাহ্মণকে তাঁর কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিয়েছেন।
মন্তব্য: তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের সমাজপতিদের সামাজিক শাসনের একটি জ্বলন্ত চিত্র উক্তিটির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। কালীময় চৌধুরী সমাজের ত্রাণকর্তা সেজে উক্তিটি করেছেন।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!