সমাজকর্ম গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব লিখ ।

অথবা, সমাজকর্ম গবেষণায় পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্ম গবেষণার পরিসংখ্যানের তাৎপর্য তুলে ধর।
উত্তরা ভূমিকা :
প্রাথমিক পর্যায়ে পরিসংখ্যান কেবল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যকলাপ যেমন- মোট জনসংখ্যা, ভূমির পরিমাণ, শিক্ষার হার, আমদানি-রপ্তানির বর্ণনা প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে পরিসংখ্যান প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষকরে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা সমাজকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে এবং তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে
জনসমক্ষে তুলে ধরার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সামাজিক গবেষণায় প্রকল্প তথা পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ করা পর্যন্ত গবেষণার প্রতিটি স্তরে গবেষক পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করে থাকেন।
সমাজকর্ম গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব : অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় সমাজকর্ম গবেষণায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার এবং গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে সমাজকর্ম গবেষণায় পরিসংখ্যানের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক সমস্যা সমাধান : প্রত্যেক সমাজেই সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। সমস্যা মুক্ত সমাজ অকল্পনীয়। যেমন- জনসংখ্যা সমস্যা, দারিদ্র্য বেকারত্ব, পুষ্টিহীনতা, কিশোর অপরাধ, রাজনৈতিক অপরাধ, ভন্নবেশি অপরাধসহ নানাবিধ সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। এসব সামাজিক সমস্যায় মূল কারণ উদ্ঘাটন করে সেগুলোর কার্যকর সমাধান প্রক্রিয়া উদ্ভাবনে সামাজিক গবেষণা একান্ত আবশ্যক। এক্ষেত্রে সংগৃহীত উপাত্তের যথাযথ ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণের জন্য পরিসংখ্যানের জ্ঞান অত্যাবশ্যক।
২. পরিকল্পনা প্রণয়ন : সামাজিক গবেষণায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যান সবিশেষ সহায়তা করে থাকে। Herbert Blalock এর মতে, “সামাজিক বিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যানের জ্ঞান ব্যতীত কোন গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে না।” বস্তুত পরিসংখ্যানের জ্ঞান একজন গবেষককে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষ করে তোলে।
৩. প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা : যে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষকরে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আয়-ব্যয়, দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ, পদোন্নতি, উৎপাদন বণ্টন, আমদানি-রপ্তানি, বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
৪. সমাজসেবা : বর্তমানে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন- বয়স্কভাতা, বেকারভাতা, অবসরভাতা, বিধবাভাতা, অন্ধকল্যাণভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্যের জন্য কি পরিমাণ জনগণ সমাজসেবার সুবিধা ভোগের আওতায় আসবে এবং এতে বার্ষিক কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তা জানার জন্য পরিসংখ্যানের জ্ঞান অত্যাবশ্যক।
৫. নীতি নির্ধারণ : যে কোনো রাষ্ট্রে বিভিন্ন নীতি যেমন জনসংখ্যা নীতি, শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, বাণিজ্যনীতি প্রভৃতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৬. কল্যাণমুখী কার্যক্রম : সমাজে ব্যাপকভিত্তিক কল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গবেষণার জ্ঞান অপরিহার্য । সামাজিক গবেষণালব্ধ উপাত্তের উপর ভিত্তি করে অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের (Phenomena) উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পরিসংখ্যানের সহায়তা ব্যতীত সফল গবেষণার পরিসমাপ্তি সম্ভব নয় । মোটকথা, সামাজিক গবেষণা সম্পূর্ণরূপে পরিসংখ্যানের উপর নির্ভরশীল।