সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধের মূলবক্তব্য আলোচনা কর।

উত্তর : প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আশিতম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পাঠ করার জন্য ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটি রচনা করেন। মৃত্যুর একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে পিছন ফিরে তিনি এ আত্মসমালোচনার দলিলটি উপহার দেন। আশৈশব যে রবীন্দ্রনাথ – ছিলেন ইংরেজভক্ত, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি সে ইংরেজ জাতি ও সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন করেছেন এ প্রবন্ধে । ইংরেজরা সভ্য জাতি, তারাই বিশ্বজুড়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির বিস্তার ও প্রসার ঘটিয়ে মানুষকে সভ্যতার আলো দেখিয়েছে। নিজেদের ভাষা-সাহিত্য- সংস্কৃতির উন্নতি সাধন করে ইংরেজরা সমগ্র পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। পরাধীন ভারতবর্ষ তারা শাসন করেছে প্রায় দুইশত বছর ধরে। প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাত্র ছয় বছর পর তারা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। রবীন্দ্রনাথ সারা পৃথিবীর অন্যান্য জাতি ও সভ্যতার সাথে পরিচিত হওয়ার পর নিজের ধ্যানধারণা ও মূল্যায়নের পরিবর্তন ঘটান। তিনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পান যে, ইংরেজরা যে সভ্যতা ভারতবর্ষকে উপহার দিয়েছে তার মূলে রয়েছে শোষণ ও বঞ্চনার করুণ আর্তনাদ। ভারতীয়দের শাসন করার জন্য যতটুকু শিক্ষা ও সভ্যতার আলো বিকিরণ করা দরকার ঠিক ততটুকুই তারা বিলিয়েছে ভারতবর্ষে। যেযন্ত্রশক্তির সাহায্যে তারা বিশ্বকে শাসন করে আসছিল তার যথোচিত চর্চা তারা এখানে করেনি। অথচ জাপান ও অন্যান্য রাষ্ট্র সে যন্ত্রশক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। পক্ষান্তরে, ইংরেজ এদেশ শাসনের জন্য ‘Law and order এর নামে চৌকিদারি চালিয়ে ভারতীয়দেরকে গোলাম বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। লেখক তাঁর এ প্রবন্ধে সভ্যতার সংকট বলতে ইংরেজ সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতাকে বুঝিয়েছেন। ইংরেজ সভ্যতার মূলে যে মানব-মৈত্রীর বন্ধন রচনা করার উদ্যোগ তা তাদের নিজেদের দেশে ক্রিয়াশীল থাকলেও ভারতবর্ষে ছিল অনুপস্থিত। এর বদলে তারা এদেশে মানবপীড়নের পথ বেছে নিয়েছিল। ফলে মানবাত্মার অপমানে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল দেশ ও জাতি। এ কারণেই ভারতবর্ষে স্বাধীনতাকামীরা ‘ইংরেজ হঠাও’ আন্দোলন শুরু করেছিল । প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ প্রথম জীবনে ইংরেজভক্ত থাকলেও শেষ জীবনে হতাশ হয়ে ইংরেজদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি দেশ, জাতি ও জনগণের মুক্তির জন্য ত্রাণকর্তার আবির্ভাব কামনা করেন। ইংরেজদের মেকি সভ্যতার মুখোশ তাঁর সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ায় তিনি বিব্রতবোধ করে প্রবন্ধটি রচনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, “আশা করব, মহাপ্রলয়ে পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এ পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরপাবার পথে।” রবীন্দ্রনাথের সে আশাবাদ অচিরেই সফলকাম হয়েছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%8d/