General Knowledge

শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় কী ছিল?

শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় কী ছিল?
অথবা, ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য লিখ।
অথবা, সংক্ষেপে ৭ মার্চের ভাষণের মূল বক্তব্য আলোচনা কর।
অথবা, ৭ মার্চের ভাষণের সারমর্ম সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্ম হয়। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করার সুদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়। লাখো জনতা উক্ত সভায় উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন জানান। ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ : রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা ও নির্বাচিত ** গণপ্রতিনিধিদের হাতে ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব নির্ধারিত ৭ মার্চ রেসকোর্সে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দেন। তাঁর এ ভাষণই বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে। মূলত এ ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। রেসকোর্সের উত্তাল জনসমুদ্রে জনগণকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা
করতে হবে।” শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” দেশকে মুক্ত করার সুদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশা-আল্লাহ।” ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল মূলত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের
শাশ্বত প্রেরণার উৎস ও প্রতীক। উক্ত সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো ছিল নিম্নরূপ :
১. অনতিবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে।
২. অনতিবিলম্বে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
…৩. সামরিক বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
৪. অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবার পূর্বে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচি এবং আহ্বানের প্রতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে
প্রশাসনের সকল স্তরের জনসাধারণ সাড়া দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের সকল অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, যানবাহন, কলকারখানা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বস্তুত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বার্তা নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের কারণে পূর্ব পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করতে। আসলে গোপনে তিনি আলোচনার
নামে সময়ক্ষেপণ, পাশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। ১৬ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। এভাবেই ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!