Download Our App


ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079

ডিগ্রী অনার্স বই App এ পেতে Whatsapp এ nock করে User ID নিয়ে Login করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Other

রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান মূল্যায়ন কর ।

অথবা , রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদানের গুরুত্ব আলোচনা কর । অথবা , রাষ্ট্রীয়চিন্তায় গ্রিকদের অবদান বিশ্লেষণ কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে ক্রমবিকাশ ও ইতিহাস পাওয়া যায় তার উৎস হলো প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তা । ভারতবর্ষ , চীন ও মিশরে প্রাচীনকালে রাষ্ট্রচিন্তার অস্তিত্ব থাকলেও প্রাচীন গ্রিসের মতো তা এতো বিস্তৃত ও সুদৃঢ় ছিল না । কেননা ব্যক্তিস্বাধীনতা , রাজনৈতিক কর্তৃত্ব , রাষ্ট্র প্রভৃতি ধারণাগুলো প্রাচীন গ্রিসে জন্মলাভ করে । প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় ন্যায়বিচার , ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা , যুক্তিকে প্রাধান্য , সমাজ ও নগররাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল , গ্রিক সমাজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীর আবির্ভাবের সাথে যে নানাবিধ ভাবধারা প্রকাশিত হয়েছে , তার মধ্যে দর্শন এবং রাজনৈতিক , চেতনা ও চিন্তাধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান : যেসব মানবসভ্যতা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ স্থান লাভ করেছে তার মধ্যে গ্রিক ছিল অন্যতম । রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গ্রিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । নিম্নে কতিপয় অবদান উপস্থাপন করা হলো :

১. স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র : প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো গ্রিক জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতার যে স্পৃহা পরিলক্ষিত হয় তা পূর্ববর্তী প্রাচ্য দেশীয় রাষ্ট্র কিংবা পরবর্তী রোম সাম্রাজ্যে কোনটিতেই তা দেখতে পাওয়া যায় না । গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর স্বায়ত্তশাসিত ইউনিটগুলো স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে যেভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করেছে তা সকল যুগকে হার মানায় । তাই এটা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে প্রতিভাত হয় ।

২. গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশ : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশে গ্রিকদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ । সকল নাগরিকের রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক যার ফলে তাদের সামাজিক জীবন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক চরিত্রবিশিষ্ট হয়ে উঠেছিল । এথেনীয়রা তাদের সংবিধানকে বলত গণতন্ত্র । কেননা সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ ছিল অপরিহার্য । মোটকথা , গ্রিক নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক উভয় জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর ।

৩. মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম অবদান হলো মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা । গ্রিক নাগরিকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পেত । পরবর্তীতে সমগ্র ইউরোপের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এ স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে ।

৪. ব্যক্তিস্বাধীনতা : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি অবদান হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা । গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হয় নি । বরং ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় যে , যার ফলে সেখানে আসন গড়তে পারে নি স্বৈরতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র । যদিও এরিস্টটল রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ সংস্থা বলেছেন , তথাপি তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতাকে অবমূল্যায়ন করেন নি ।

৫. রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা : রাষ্ট্র সম্পর্কে গ্রিক দার্শনিকগণ মনে করতেন যে , রাষ্ট্র হলো যুক্তিবাদী চিন্তাধারা ও আচরণের ফসল । প্লেটো , এরিস্টটলসহ কোন দার্শনিক মনে করেন নি যে , চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে । স্বাভাবিক উপায়ে এর জন্ম হয়েছে । প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রকে কেবল একটি রাজনীতিক বা আইনি সংগঠন হিসেবে মনে করা হয় নি । একে একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও মনে করা হতো । রাষ্ট্র তাদের কাছে সৎগুণের প্রতীক ছিল । গ্রিক দার্শনিকগণ রাষ্ট্রের জৈবতত্ত্ব ও ভাবধারায় বিশেষভাবে আস্থাশীল ছিলেন ।

৬. ন্যায়বিচার ও প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা : প্রাচীন গ্রিসে প্রকৃতিকে আইনের উৎস মনে করা হতো । পরে অবশ্য এ ধারণা বদলে যায় । মনুষ্য সৃষ্ট আইনের প্রতি জোর দেয়া হয় এবং লিখিত আইন প্রণয়নে অনেকে আগ্রহী হয় । আইন , যুক্তিবাদিতা , ন্যায়বিচার প্রভৃতি ধারণা প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় বিশেষ প্রাধান্য লাভ করে । গ্রিকরা জিউসকে সর্বজনীন লিপ্ত হওয়া । বিখ্যাত কবি হোমারও তার নানা কাব্যে ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করেছেন । ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে মনে করত এবং তার নির্দেশ লঙ্ঘন করা মানে ন্যায়বিচার লঙ্ঘন করা ও সমাজবিরোধী কাজে

৭. আইনের শাসনের প্রতি আনুগত্য : প্লেটো দার্শনিক রাজা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা তত্ত্বে আইনের শাসনের প্রতি যেরূপ Politics ‘ গ্রন্থে ঘোষণা করেছেন , বিধিসম্মতভাবে গঠিত আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্যে ব্যক্তির যথার্থ স্বাধীনতা গুরুত্বারোপ করেছেন , যাতে মানবসমাজে কোন ব্যক্তির প্রাকৃতিক অধিকার কোন রকমে ক্ষুণ্ন না হয় । এরিস্টটল তাঁর The ও মুক্তি নিহিত । তার এ বক্তব্যের দ্বারা মানব স্বভাবের বাস্তব দিকের প্রতি দিকনির্দেশনা করেছেন । বিশ্বব্যাপী যে আইনের শাসনের প্রতি আজ সবাই সোচ্চার , গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন তার প্রতি তিন হাজার বছর পূর্বে দিকনির্দেশনা দিয়েছে ।


৮. রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধিকরণ : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার আরেকটি অবদান হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ । তারা রাষ্ট্রের কার্যাবলি সীমিত করার পক্ষে ছিল না । তাই তারা রাষ্ট্রের কার্যাবলির উপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করে নি ।

মূল্যায়ন : গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনে মানবিকতা নয় , সামাজিক প্রথার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । এখানে যে মুক্তমন ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে তা আদৌ বাস্তবে পরিলক্ষিত হয় নি । এছাড়া গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় প্রাকৃতিক আইন থেকে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে । কিন্তু নাগরিক অধিকার যেখানে প্রাকৃতিক আইনের দ্বারা স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছে ; সেখানে রাষ্ট্রের আইনের কর্তৃত্ব থাকে । তবে এসব সমালোচনা সত্ত্বেও আমাদের মনে রাখতে হবে গ্রিক গণতন্ত্র হলো প্রাচীন গণতন্ত্র । এথেন্সের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজকের গণতন্ত্রের আলোকে বিচার করলে ভুল হবে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে , প্রাচীন গ্রিসই ছিল রাষ্ট্রচিন্তার জন্মভূমি এবং সেখান থেকেই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার যাত্রা শুরু । প্রাচীন গ্রিসের যুক্তিবাদিতা , ন্যায়বিচার ও প্রকৃতি , ধর্ম ও পুরাকথা , নগররাষ্ট্র কেন্দ্রিকতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের দ্বারা গড়ে উঠেছিল , যা তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি বিশেষ দর্শন বা রাষ্ট্রদর্শন হিসেবে স্বীকৃত । এছাড়া বর্তমান বিশ্বে আমরা যে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে প্রত্যক্ষ করি , তার ফলশ্রুতি হলো গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন । সুতরাং বলা যায় , সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!