রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধের মূল বিষয় লিখ।

উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’ নামক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে এ পত্রিকায় একটি ব্রিটিশবিরোধী নিবন্ধ প্রকাশ করার অপরাধে কবিকে গ্রেফতার করে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। একই বছরের ৭ জানুয়ারি কবি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাবে একটি জবানবন্দী লেখেন। এ জবানবন্দীটিই ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ হিসেবে পরবর্তীতে মুদ্রিত হয়। এ নিবন্ধে কবি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য ঝেড়েছেন। তিনি নিজেকে সত্যের পূজারী এবং সরকার ও তার কর্মচারীদের অসত্যের প্রতীক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর সাথে স্বয়ং ভগবান আছেন এবং ভগবানের নির্দেশেই তিনি সব কিছু করেন বলে আস্ফালন করেছেন। কবি দেখেছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষে অন্যায়কে অন্যায় বললে ইংরেজের কাছে তা হয় রাজদ্রোহ। কিন্তু জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায় ও দিনকে রাত বলানো কোনো ন্যায়ের শাসন হতে পারে না। আর এ শাসন কোনোদিন চিরস্থায়ী হয় না। কবি সত্যকে জাগিয়ে তুলেছেন। আর অন্যায় শাসনক্লিষ্ট বন্দী সত্যের পীড়িত ক্রন্দন কবির কণ্ঠে ফুটে উঠার কারণেই তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছে। কবির মতে তাঁর কণ্ঠের ঐ প্রলয় হুঙ্কার তাঁর একার নয়; তা নিখিল বন্দীআত্মার যন্ত্রণা চিৎকার। হাজারো ভয় দেখিয়ে এ ক্রন্দনকে থামানো যাবে না। কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে অন্তরীণ কবি আত্মচেতনার শক্তিতে বলীয়ান ছিলেন। তিনি ছিলেন চরম আত্মবিশ্বাসী। তাই যাকে অন্যায় বলে বুঝেছেন তাকে অন্যায় বলেছেন, মিথ্যাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেছেন, অত্যাচারকে অত্যাচার বলেছেন। কবি কাউকে তোষামোদ করেননি, প্রশংসা বা প্রসাদের লোভে কারও পা চাটেননি। সমাজ জাতি ও দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল প্রকারের অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। বিদ্রূপ, অপমান, আঘাত, লাঞ্ছনা অপরিমেয় ভাবে বর্ষিত হলেও তিনি সত্যচ্যুত হননি। লোভের বশবর্তী হয়ে নিজেকে কারো কাছে বিক্রি করেননি। কবি নিজের আত্মাকে সত্যদ্রষ্টা ঋষির আত্মা বলে দাবি করেছেন। তিনি অজানা অসীম পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি তাঁর অহঙ্কার নয় এটি তাঁর আত্মোপলব্ধির আত্মবিশ্বাসের চেতনালব্ধ সহজ সত্যের স্বীকারোক্তি। তিনি নিজেকে ভয়হীন, দুঃখহীন এক অমৃতের পুত্র বলে দাবি করে পরম অহঙ্কারের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।