মৌলিক গণতন্ত্র কি

ভূমিকা: জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সূত্রপাত করলেও তিনি বেশিদিন তা ভোগ করতে পারেন নি। মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণ করে পাকিস্তানের স্বনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। একই সাথে তিনি প্রধান সেনাপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদে বহাল রইলেন। এক দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে তিনি বেশ কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেন। কিন্তু তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ গণতন্ত্র ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করে, দু’অংশের ব্যবধান বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বাঙালি জাতি গড়ে তোলে দুর্বার আন্দোলন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর শাসনকাল (১৯৫৮-৬৯) গুরুত্বপূর্ণ। আইয়ুব খান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামে তথাকথিত পরোক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন। প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে বার বার শাসক পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থিতিশীল শাসনে বাধা সৃষ্টি করেন। পূর্ববাংলায় এর প্রতিক্রিয়া ঘটতে সময় লাগেনি। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। আওয়ামী লীগের ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের প্রতি যে সীমাহীন বৈষম্য সৃষ্টি করে, তার বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ছিল ৬ ও ১১ দফা। সরকার সর্বাত্মক নির্যাতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালালেও বরং এই প্রচেষ্টা বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। এবং আইয়ুবের পতনের ঘন্টা বেজে ওঠে। এই ইউনিট শেষে আপনি আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ৬ দফা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক নিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন সম্পর্কে বর্ণনা দিতে পারবেন।

মৌলিক গণতন্ত্র : মৌলিক গণতন্ত্র হল এমন এক ধরণের সীমিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা যেখানে সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রদানের পরিবর্তে কিছু সংখ্যক নির্ধারিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের করা হয়।

মৌলিক গণতন্ত্র (Basic Democracy) হলো জেনারেল আইয়ুব খানের এক অভিনব শাসন ব্যবস্থা। ১৯৫৮ সালে এক সামরিক অভ্যূত্থান ঘটিয়ে আইয়ুব খান পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করে। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে ২৬ অক্টোবর ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক ধরণের শাসন ব্যবস্থার আদেশ জারি করেন। তাই আইয়ুব খানকে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার প্রবর্তক বলা হয়।

আইয়ুব খান পাকিস্তানের উভয় প্রদেশে নতুন চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা একাধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গঠন করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে এটি জনগণের ইচ্ছাকে সরকারের কাছাকাছি এবং সরকারী কর্মকর্তাদেরকে জনগণের কাছাকাছি এনে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সম্পন্ন করবে। আইয়ুব খান বলেন, ”It will be a foundation stone of a new political system in the country.” অর্থাৎ এটি হবে দেশে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর।

১৯৬০-এর দশকে জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে প্রবর্তিত একটি স্থানীয় সরকার পদ্ধতি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান একটি নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ ১৯৫৯ জারি করেন। অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ এ সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পোষণ করত এবং তারা একে জেনারেল আইয়ুব খান এবং তাঁর সহযোগী কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি সুনিপূণ কৌশল হিসেবেই গণ্য করত।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে মৌলিক গণতন্ত্র ছিল একটি পাঁচ স্তরবিশিষ্ট ব্যবস্থা। নিম্ন থেকে শুরু করে এ স্তরগুলো ছিল (১) ইউনিয়ন পরিষদ (পল্লী এলাকায়) এবং শহর ও ইউনিয়ন কমিটি (পৌর এলাকায়), (২) থানা পরিষদ (পূর্ব পাকিস্তানে), তহশিল পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তানে), (৩) জেলা পরিষদ, (৪) বিভাগীয় পরিষদ এবং (৫) প্রাদেশিক উন্নয়ন উপদেষ্টা পরিষদ।

একজন চেয়ারম্যান এবং প্রায়শ ১৫ জন সদস্য নিয়ে একেকটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হতো। এতে নির্বাচিত এবং মনোনীত উভয় ধরনের সদস্যই থাকতেন। পরিষদের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নির্বাচিত এবং এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন মনোনীত বেসরকারি সদস্য, যারা সরকার কর্তৃক নিয়োজিত হতেন। তবে, ১৯৬২ সালের এক সংশোধনী দ্বারা মনোনয়ন প্রথা বিলোপ করা হয়। ফলে পরিষদের সদস্যবৃন্দ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরোক্ষভাবে সদস্যদের দ্বারা তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হতেন। এক দিক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ছিল পূর্বেকার ইউনিয়ন বোর্ডেরই অনুরূপ, তবে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বলা হতো মৌলিক গণতন্ত্রী। সারা দেশে সর্বমোট পরিষদের সংখ্যা ছিল ৭৩০০।

সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিনিধি নিয়ে দ্বিতীয় স্তরের থানা পরিষদ গঠিত হতো। এসকল প্রতিনিধি নিজেরা ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহর কমিটির চেয়ারম্যান। সরকারি সদস্যবৃন্দ দেশ গঠনমূলক কাজে থানার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং এদের সংখ্যা নির্ধারণ করতেন সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট। তবে, সরকারি সদস্যদের সর্বমোট সংখ্যা কোনো ক্রমেই  বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যার চেয়ে বেশি হতে পারত না। থানা পরিষদের প্রধান থাকতেন মহকুমা অফিসার (এস ডি ও), যিনি পদাধিকারবলে থানা পরিরষদের চেয়ারম্যান হতেন। মহকুমা অফিসারের অনুপস্থিতিতে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) পদাধিকারবলে থানা পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রে থানাকে তহসিল বলে অভিহিত করা হতো এবং তহসিলের সভায় সভাপতিত্ব করতেন তহশিলদার। তখন পাকিস্তানে মোট ৬৫৫টি থানা ও তহশিল ছিল।

তৃতীয় স্তরে ছিল জেলা পরিষদ। একজন চেয়ারম্যান এবং সরকারি ও বেসরকারি সদস্যদের নিয়ে এ পরিষদ গঠিত হতো। সদস্যদের সংখ্যা ৪০-এর বেশি হতো না। সকল থানা পরিষদের চেয়ারম্যানই সংশ্লিষ্ট  জেলা পরিষদের সদস্য থাকতেন এবং উন্নয়ন বিভাগের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অন্যান্য সরকারি সদস্য মনোনীত হতেন এবং সমান সংখ্যক সদস্য মনোনীত হতেন বেসরকারি সদস্যদের মধ্য থেকে। বেসরকারি সদস্যদের অন্তত অর্ধাংশ মনোনীত হতেন ইউনিয়ন পরিষদ ও শহর কমিটির চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পদাধিকারবলে এ পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন এবং পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেন ভাইস-চেয়ারম্যান। পাকিস্তানে ৭৪টি জেলা পরিষদ ছিল। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ছিল জেলা পরিষদ। এটি ছিল জেলা বোর্ডের উত্তরসূরী প্রতিষ্ঠান। সদস্যসংখ্যার দিক দিয়ে এ পরিষদ ১৮৮৫ সালের অবস্থান থেকে অনেকখানি সরে এসেছে, কেননা তখন শতকরা ২৫ ভাগ সদস্য মনোনীত হতো।

চতুর্থ ও শীর্ষ স্তর ছিল বিভাগীয় পরিষদ। বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকারবলে এ পরিষদের চেয়ারম্যান থাকতেন। এতে সরকারি ও বেসরকারি  উভয় ধরনের সদস্য ছিলেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য ছিলেন ৪৫ জন। সরকারি সদস্য ছিলেন বিভাগের অন্তর্গত সকল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সরকারি উন্নয়ন বিভাগের প্রতিনিধিবর্গ। সর্বমোট বিভাগীয় পরিষদের সংখ্যা ছিল ১৬।

মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় পাকিস্তানের দুই অংশে একটি করে প্রাদেশিক উন্নয়ন উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা ছিল। গঠনবিন্যাসের দিক দিয়ে এটি ছিল বিভাগীয় পরিষদের অনুরূপ। ব্যতিক্রম এই যে, নিয়োজিত সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হতো। এ পরিষদের বলতে গেলে কোন ক্ষমতাই ছিল না। তবে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হওয়ার পর এ পরিষদ বাতিল হয়ে যায়।

মৌলিক গণতন্ত্র আদেশবলে যে পাঁচটি পরিষদ সৃষ্টি করা হয় তাদের মধ্যে শুধু দু’টি পরিষদ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিভাগীয় পরিষদ এবং থানা পরিষদ প্রধানত সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করত। ইউনিয়ন পরিষদ বিভিন্ন ধরনের কার্যে নিয়োজিত থাকত, যেমন  ইউনিয়নের কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, সমাজ উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশবাহিনীর দ্বারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করত এবং তদীয় সালিসি কোর্টের মাধ্যমে ছোটখাটো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করত। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ, জমিতে জলসেচ ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মান প্রভৃতি কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বভারও ন্যস্ত ছিল ইউনিয়ন পরিষদের উপর। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদকে কর ধার্য ও আদায় এবং মূল্য, টোল ও ফি আদায়ের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ এবং দুটি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৮০,০০০ সদস্য সমন্বয়ে নির্বাচকমন্ডলী  গঠন করে।

থানা পরিষদ, তহশিল পরিষদ মূলত একটি সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানমূলক সংগঠন। থানা পরিষদ তার আওতাধীন সকল ইউনিয়ন পরিষদ ও শহর কমিটির কার্যক্রমের সমন্বয় বিধান করত। থানা পরিষদই চলতি প্রকল্পসমূহ তত্ত্বসাধনসহ ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহর কমিটির প্রণীত সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার সমন্বয় বিধান করত। থানা/তহশিল পরিষদ জেলা পরিষদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করত এবং ঐ পরিষদের নিকট দায়ী থাকত। জেলা পরিষদ মূলত তিন ধরনের দায়িত্ব পালন করতো : বাধ্যতামুলক দায়িত্ব, ঐচ্ছিক দায়িত্ব এবং সমন্বয়মূলক দায়িত্ব। বাধ্যতামূলক দায়িত্বগুলোর মধ্যে ছিল সরকারি রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ও ব্রীজ নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় রক্ষণাবেক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ, সরকারি ফেরী নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন। ঐচ্ছিক দায়িত্বগুলোর বিষয় ছিল শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক কল্যাণ এবং গণপূর্ত। এছাড়াও জেলা পরিষদের উপর কৃষি, শিল্প, সমাজ উন্নয়ন, জাতীয় পুনর্গঠনের প্রসার এবং সমবায় উন্নয়নের মত বিশাল কর্মকান্ডের দায়িত্বও অর্পিত হয়। জেলার মধ্যে স্থানীয় পরিষদসমূহের সকল কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধনও ছিল  জেলা পরিষদের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া জেলা পরিষদ জাতি গঠনমূলক বিভাগসমূহের গৃহীত পরিকল্প এবং এগুলোর আরও উৎকর্ষ ও উন্নয়ন সাধনের প্রস্তাব দান এবং বিভাগীয় পরিষদ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এ প্রস্তাব সম্বলিত সুপারিশ পেশ করবে। চতুর্থ স্তরের সংগঠন বিভাগীয় পরিষদ কার্যত একটি অত্যন্ত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এটি ছিল ঐ স্তরের একটি উপদেষ্টা পরিষদ বিশেষ।

মৌলিক গণতন্ত্র স্থানীয় সরকারের ভিত্তি হিসেবে বলবৎ থাকা ছাড়াও জনগণের সমর্থন ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারকে বৈধতা দানের জন্য রাজনৈতিক ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করত। ১৯৬০ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যে রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হয়, তাতে মৌলিক গণতন্ত্রীরা আইয়ুব খানের সপক্ষে রায় দেয়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক জনগণ মৌলিক গণতন্ত্রী কর্তৃক একচেটিয়া নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে, যার ফলে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যত্থান ঘটে। মৌলিক গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধু যে আইয়ুব সরকারকে বৈধতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, বরং ১৯৬৯ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের পতনের পর এর নিজস্ব বৈধতাও হারিয়ে ফেলে।

উপসংহার: আইয়ুব খান তাঁর ক্ষমতার ভিত পোক্ত করার জন্য মৌলিক গণতন্ত্র নামক যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করেন সেটি দেশের জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়েছে। এবং একই সঙ্গে তাঁর পতনেরও কারণে পরিণত হয়েছে। তাঁর পরবর্তী শাসক ইয়াহিয়া খান তাই এই ব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থাও করেন।