মেরি ওলস্টোনক্রাফটের নারীবাদী দর্শন ব্যাখ্যা কর।

অথবা, নারীবাদ সম্পর্কে মেরি ওলস্টোনক্রাফটের ধারণা বর্ণনা কর।
অথবা, মেরি ওলস্টোনক্রাফটের নারীবাদী দর্শন সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মেরি ওলস্টোনক্রাফটের নারীবাদী দর্শন সম্পর্কে তুমি যা জান লিখ।
অথবা, নারীবাদ সম্পর্কে মেরির অভিমত সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, মেরি নারীবাদ সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন তা সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
উদারতাবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে সকল নারীবাদী মহিলা নারীমুক্তির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে মেরি ওলস্টোনক্রাফট এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৭৫৯ সালে জন্মগ্রহণকারী মেরি ওলস্টোনক্রাফট নারীবাদী চিন্তার জগতের প্রথম পথিকৃৎ এবং নারীবাদের জননী। কেননা তিনিই প্রথম, নারী অধিকারের লক্ষ্যে সমাজব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেন। “মেরি ওলস্টোনক্রাফট এর নারীবাদী দর্শন : মেরি তাঁর ‘A Vindication of the Rights of Men’ (1790) এবং ‘A Vindication of the Rights of Women’ ( 1792) গ্রন্থে নারীবাদী মতাদর্শ ও চিন্তাধারা বিবৃত করেছেন। মেরি তাঁর প্রথম গ্রন্থে ‘মানুষের অধিকার এবং দ্বিতীয় গ্রন্থে ‘নারীর অধিকার’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। মেরি প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন যে, সমাজে নারী পুরুষ বৈষম্য প্রকৃতিই সৃষ্টি করে দিয়েছে। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে সক্ষম হন যে, সমাজে নারী পুরুষ বৈষম্য মানুষেরই সৃষ্টি। মেরি ওলস্টোনক্রাফট এর চিন্তাধারায় যুক্তি বা বিচারবুদ্ধির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সমাজে নারীর প্রকৃতিকে ইচ্ছামাফিক রূপায়িত করে এবং নারীকে খণ্ডিত; বিচার বোধহীন, যুক্তিবর্জিত; আবেগপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে। নারী এ অবস্থায় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে হীনম্মন্যতাবোধে আক্রান্ত হয়। খণ্ডিত যুক্তি বর্জিত নারী নিজেকে মূল্যবান করে তুলতে রূপচর্চার মাধ্যমে পুরুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে । মেরি এর বিরোধিতা করে বলেন, নারীর এরূপ চরিত্রায়ন স্বভাবজাত বা প্রকৃতিগত নয় এবং হতেও পারে না। কেননা বিচারবুদ্ধি মনুষ্যজাতিকে পশু থেকে পৃথক করেছে। নারী ও পুরুষ উভয়ই মনুষ্যজাতির অংশ। মেরি বলেন যে, পুরুষকে যদি নারীর মতো বাঁচার আবদ্ধ করে রাখা হতো, তাহলে পুরুষের মধ্যেও নারীর মতো চরিত্র সৃষ্টি হতো।উদারতাবাদে বিশ্বাসী মেরি নারী শিক্ষার অভাবকে নারীর অধস্তনতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে নারীমুক্তি সম্ভব। নারীকে সচেতন করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নারীর চারিত্রিক অসম্পূর্ণতা দূর হবে। নারী বিচারবুদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ হবে। তবে মেরি নারী পুরুষের অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছেন। বালক-বালিকাকে অভিন্ন শিক্ষা দিতে হবে। তবেই জেন্ডার বৈষম্য সমাজ হতে দূর হবে। এভাবে নারীরা সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারবে।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে, সমাজে নারীর অধস্তনতার মূল কারণ সমাজের প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতি এবং আইনগত ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত; যা নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান, আইনকানুন, বিধিব্যবস্থা, সংস্কার সংশোধন করে নারী ও পুরুষের বৈষম্য ও অসমতা দূর করা সম্ভব। সুতরাং বলা যায়, মেরি নারীর ব্যক্তিগত বিকাশের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/