মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব কী?

অথবা, মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জগৎ ও জীবনের সম্ভাবনাকে যুক্তির আলোকে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করা হলো দর্শন। একজন দার্শনিক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মনোভাবের অধিকারী। তিনি জ্ঞান ও সত্যের সন্ধানে যুক্তিবিচার ও যুক্তি বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হন। কুরআন ও হাদিসের আলোকে দার্শনিকগণ যেসব বিষয় আলোচনা করেন তাই মুসলিম দর্শন নামে পরিচিত।
মুসলিম দর্শনের গুরুত্ব : দর্শনের ইতিহাসে পাশ্চাত্য দর্শনের আলোচনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মুসলিম দর্শন ভারতীয় দর্শন, নৈতিক দর্শনেও গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. জ্ঞানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা : সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম জাতির ইতিহাস এক স্বর্ণোজ্জ্বল গৌরব যুগ। সে সময় মুসলমান জাতি জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলনে ও বিস্তারে উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছিল। তারা তাদের দর্শনের আলোচনার মাধ্যমে জ্ঞানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল।
২. আধুনিক ইউরোপের চিন্তার ভিত্তি : আধুনিক ইউরোপের যে চিন্তাধারা তার ভিত্তি করা যেতে পারে মুসলিম দর্শনকে । ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিম দর্শন প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্যতম প্রবল শক্তি হিসেবে ক্রিয়াশীল ছিল।
৩. রেনেসাঁয় অবদান : ইউরোপের রেনেসাঁর মূলে মুসলিম দার্শনিকদের অবদান অনস্বীকার্য। যারা এ মতকে অস্বীকার করেন তারা আসলে আধুনিক দর্শনের যে ধারাবাহিক বিবর্তন এবং তার যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ শৃঙ্খলতাকে অস্বীকার করেন। রেনেসাঁর যে মূলনীতি সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও স্বাধীনতা তা ইসলামে উচ্চারিত হয়েছে।
৪. নৈতিক মূল্যবোধকে উচ্চস্থান দান : ইসলামের মূলনীতি হতে উৎসারিত মুসলিম দর্শন সব সময়ই নৈতিক মূল্যবোধকে উচ্চস্থান দিয়েছে। মুসলিম দর্শন শুধু ভাববাদে পর্যবসিত হয় নি বরং এ দর্শনে ভাববাদ, বস্তুবাদ, প্রজ্ঞাবাদের সমন্বয়ে এক নব্য চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছে, যা উচ্চ নৈতিক মান সম্পন্ন।
৫. চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান : ইবনেসিনার হাতে চিকিৎসাবিদ্যার এতই উন্নতি সাধিত হয়েছিল যে, তার পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে চিকিৎসা বিদ্যায় তিনিই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাঁর কিতাবুল শিক্ষা’ এক যুগান্তকারী গ্রন্থ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলমান চিন্তাবিদদের জগৎ ও জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা এবং সে সম্পর্কে তাদের মতামতই মুসলিম দর্শন হিসেবে পরিচিত। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হলে মুসলিম দর্শনের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।