মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস বলতে কী বুঝ?

অথবা, মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস কাকে বলে?
অথবা, মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
অথবা, মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ইসলামের ক্রমবিকাশের ধারায় বিভিন্ন যুগে উদ্ভূত বিভিন্ন দার্শনিকতত্ত্ব যা কুরআন ও হাদিসের পরিপন্থী নয় তা মুসলিম দর্শনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামের অব্যাহত অগ্রগতির ধারায় পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কুরআন ও হাদিসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন চিন্তাধারাও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ফলে মুসলিম দর্শনের ব্যাপকতা শুধু কুরআন ও হাদিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, এর বাইরেও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। গড়ে উঠেছে।
মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস : কুরআন ও হাদিসের উপর ভিত্তি করেই মুসলিম দর্শন আর কুরআন ও হাদিসকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ইজমা ও কিয়াসের সৃষ্টি হয়েছে। তাই মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎস চারটি। যথা :
১.আল কুরআন, ২. হাদিস, ৩: ইজমা ও ৪. কিয়াস।
১. আল কুরআন : আল কুরআন এমন এক মহাগ্রন্থ, যার সাথে সত্যিকারভাবে মানুষের প্রজ্ঞার বা দর্শনের কোন বিরোধ নেই। যে আয়াত প্রথম অবতীর্ণ হয়, তাতে বলা হয় যে, “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দেন এবং বস্তুর স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞানদান করেন (সুরা ৯৬, আয়াত ৪)। কুরআন সম্পর্কে আলোচনার প্রেক্ষিতে মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় বা School এর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমরা নিঃসন্দেহে কুরআনকে মুসলিম দর্শনের
প্রধান উৎস হিসেবে বলতে পারি।
২. হাদিস : কুরআনের মতো হাদিসও মুসলিম দর্শনের অন্যতম মূল উৎস। হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর উপর বিদ্যার্জন ফরজ। জ্ঞান ও সত্যের প্রতি ঐকান্তিক কামনা ও মনোনিবেশই তার শিক্ষার ভিত্তি। কুরআন যেমন দার্শনিক চিন্তার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, তেমনি হাদিসেও মুসলমানদের দার্শনিক চিন্তার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
৩. ইজমা : মানুষের জ্ঞান সীমিত। তাই তার পক্ষে কিছু উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। কুরআন সম্পর্কিত জটিল বিষয় সম্পর্কে হাদিসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আবার হাদিসে যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে তার সম্পর্কে সমাধানের পক্ষে ঐকমত্যের কথা হাদিসেই বলা হয়েছে। আর এ ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে ইজমা।

  1. কিয়াস : কুরআন, হাদিস ও ইজমার পর কিয়াসের স্থান। ইজমার মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান না হলে কিয়াসের প্রয়োজন । কিয়াস মুসলিম দর্শনের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
    উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম দর্শনের অভ্যন্তরীণ উৎসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মুসলিম দর্শনে কোন সমস্যা দেখা দিলে কুরআন ও হাদিসের সাহায্যে তার সমাধান করা হয়। আর কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে পারলে ইজমা ও কিয়াসের সাহায্য নিতে হয়। সুতরাং কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম।