Download Our App

মুতাজিলারা আল্লাহর দর্শন বলতে কী বুঝেন?

অথবা, দিব্য দর্শন বলতে মুতাজিলারা কী বলেন?
অথবা, আল্লাহর দর্শন সম্পর্কে মুতাজিলাদের বক্তব্য কী?
অথবা, দিব্য দর্শন সম্পর্কে মুতাজিলাদের অবস্থান তুলে ধর।
অথবা, আল্লাহর দর্শন সম্পর্কে মুতাজিলাদের অভিমত কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুতাজিলা মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ওয়াসিল বিন আতা। মুতাজিলারা বুদ্ধিকে সাথে নিয়ে ইসলামকে যৌক্তিকভাবে প্রমাণের প্রচেষ্টা চালান। দ্বান্দ্বিক বিচার বিশ্লেষণের সাহায্যে তারা মুসলিমদের যুক্তি চূর্ণ করে দেন। এর ফলে সমুন্নত ও সুদৃঢ় হয় ইসলামের ভাবমূর্তি। সুতরাং মুতাজিলারা ছিলেন স্বাধীন চিন্তাবিদ এবং এ কারণেই বিভিন্ন ধর্মীয় ও দার্শনিক প্রশ্নে তারা নিজস্ব মত পোষণ করতেন। আল্লাহর দর্শন বা দিব্য দর্শন সম্পর্কে মুতাজিলাদের মত : রক্ষণশীল মুসলমানদের মতে, পরকালে আল্লাহর দর্শন ঘটবে। তাদের মতে, যারা বেহেশতে দাখিল হবেন, তাদের জন্য সবচেয়ে খুশির খবর হলো যে, তারা আল্লাহর দর্শন লাভ করবেন। তবে মুতাজিলারা সাধারণ মুসলমানদের এ ধরনের ধারণাকে বুদ্ধিদ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পান। তারা বলেছেন, আল্লাহর দর্শন এ ইঙ্গিত দেয় যে, একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব এবং সময়ে আল্লাহর অবস্থান থাকবে। আর এটি আল্লাহর ধারণার বিপরীত। কেননা, আল্লাহ্ নিরাকার। তাছাড়া আল্লাহর অস্তিত্বকে দেশ ও কালের ঘরে ফেলা যায় না। তারা বলেছেন, আল্লাহর দর্শন সম্ভব নয়, এমনকি বেহেশতেও নয়। তারা কুরআনের উদ্ধৃতি দেন, ‘দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পারে না, অবশ্যই তিনি দৃষ্টিসমূহ পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সুবিজ্ঞ।” (৬ঃ১৩) একমত হয়ে বলেছেন,
তবে কিছু কিছু মুতাযিলা দিব্যদর্শন সম্পর্কে ভিন্ন ধরনের মত পোষণ করেন। অন্যান্য মুতাজিলাদের সাথে তারা চর্ম.চক্ষুর মাধ্যমে আল্লাহকে দেখা যায় না। তবে অন্তদর্শন বা অন্তরের উপলব্ধির মাধ্যমে তা সম্ভব। অর্থাৎ দিব্যদর্শন বিষয়টি তারা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ না করে রূপকভাবে গ্রহণ করেন। আল্লাহ্ যেহেতু দেহবিশিষ্ট নন, তাই তার দর্শন সম্ভব নয়। আল্লাহর দর্শন বলতে বুঝায় মানস চোখে তাকে উপলব্ধি করাকে। আর এটি চোখে দেখা থেকে পৃথক আর এভাবে তারা রক্ষণশীল মুসলমানদের মতকে অস্বীকার করেন। এভাবে তারা নিজেদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের লোক বলে অভিহিত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাধারণ মুসলমানরা মনে করেন, আল্লাহর দর্শন সম্ভব। কিন্তু মুতাজিলা চিন্তাবিদরা মনে করেন, আল্লাহর দর্শন কখনো সম্ভব নয়। এমনকি বেহেস্তেও আল্লাহর দর্শন সম্ভব নয়।