মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা কর।*
অথবা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও পরিচালনা সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা সম্পর্কে তুমি যা জনি সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তবে এ স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়া মোটেও সুখকর ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পুরো প্রক্রিয়াকে সংগঠিত ও পরিচালিত করতে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কল্যাণে বাংলাদেশে উদিত হয়
স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা : দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে
মুজিবনগর সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাঙালিদের নিয়ে পাল্টা বিভিন্ন বাহিনী গড়ে উঠে। এদের মধ্যে ছিল কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র যুবক, নারী, পুলিশ, আনসার, ই.পি.আর. (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্), বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও অন্যদের নিয়ে গঠিত বিশাল মুক্তিবাহিনী, প্রধানত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে গঠিত বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স (বি. এল. এফ. বা মুজিব বাহিনী), নৌ-কমান্ডো ইত্যাদি। এক পর্যায়ে পেশাদার সৈন্যদের নিয়ে নিয়মিত স্থল, নৌ ও
বিমান বাহিনী গঠিত হয়। এছাড়া, দেশের অভ্যস্তরে ব্যক্তি উদ্যোগে আরও বেশকিছু বাহিনী গড়ে উঠে, যার মধ্যে টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এর নেতৃত্বাধীন বাহিনী (যা ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ নামে খ্যাত) বিশেষভাবে উল্লেখ্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক (Supreme Commander) ছিলেন অস্থায়ী সরকারের
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কর্নেল (পরে জেনারেল) এম.এ.জি. ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর এবং প্রত্যেক সেক্টরকে কয়েকটি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনীর সদস্যদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে স্থাপিত প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অর্জন করতে মুক্তিসেনাদের সময় লেগেছিল ৯ মাস। আর এটি সম্ভব হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানের কল্যাণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!