প্রশ্নের উত্তর

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।

অথবা, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি আলোচনা কর।
অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ কর।
অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সবিস্তারে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা ইতিহাসে বিরল। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নয়মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এ নয় মাসে বাংলাদেশে হাজারো ধারায় রক্তস্রোত প্রবাহিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার জন্য আত্মদান করেছে কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ নরনারী, সম্ভ্রম হারিয়েছেন কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মহীয়সী মাতা ও ভগ্নি, গৃহহারা হয়েছে অন্ততপক্ষে এক কোটি বাঙালি এবং ছিন্নমূল ও সর্বহারা হয়েছেন অসংখ্য মানব সন্তান। বাংলাদেশে স্বাধীনতা সূর্য উদিত হয়েছে তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে। এখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, নেতৃত্ব ও কৌশল সম্পর্কে যথাপরিসরে আলোচনা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট : পাকিস্তানি সামরিক জান্তা একদিকে সংকট নিরসনের নামে ঢাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্র আনা হচ্ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির বিজয়কে তারা মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। ৬ দফা প্রশ্নে মুজিবের
অনড় অনমনীয় অবস্থান তাদের বিচলিত করে। তখনই তারা উদ্ভূত সংকটের সামরিক সমাধানে মনস্থির করে বলা যায় । ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় নেয়া হয়। ২৫ মার্চ সারাদিন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সন্ধ্যায় কোনোরূপ ঘোষণা ছাড়াই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করলে বুঝতে বাকি ছিল না যে বিপদ আসন্ন। বঙ্গবন্ধু নেতা কর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য গোপন নির্দেশ দিলেন। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয়া বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের উপর ট্যাঙ্ক, কামান, ভারি মেশিন গান ও অন্য অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে আক্রমণ চালালো। শুরু হয় তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’। পিলখানা ই.পি.আর (বর্তমান বি.ডি.আর) ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, শহরের বিভিন্ন ছাত্রাবাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তাঁতি বাজার, শাখারিপট্টি, মাসিক কলোনি ইত্যাদি আক্রমণের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়। একই সময় একই কায়দায় সারাদেশে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতেই অগণিত নর নারী, শিশু হত্যার শিকার হয়। ঘুমন্ত মানুষও রেহায় পায়নি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস
বাংলাদেশে ২৫ মার্চের মতো নির্মম, নিষ্ঠুর গণহত্যা চালায়। ২৫ মার্চ বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে একটি কালোরাত্রি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের বীজরোপণ হয়েছিল ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে অনেক ঝড় বয়ে গেছে । এক পর্যায়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, চলে নয় মাস। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ অর্থাৎ মহান বিজয়।

হ্যান্ডনোট থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!